লাল চা

Friends, Marriage, Red, Story, Subhra's Chronicles, বাংলা

একি আপনি এখনও খাননি? চা টা তো ঠাণ্ডা বরফ হয়ে গেল। আমি কিন্তু বার বার করে লাল চা দিতে পারবনা। এ বাড়ির একেকজনের একেকরকম ফরমাশ। কেউ দুধ চা, কেউ লিকার তো কেউ আবার গ্রীন টি। আরে আমিও তো মানুষ নাকি,” খানিকটা চেঁচিয়েই তার শ্বশুরমশাই কে কথাগুলো বলল রিতু।

রাজীববাবু কোনো উত্তর দিলেন না।

দিন কাপটা, একটু গরম করে দি,” বলে হাত বাড়াল রিতু।

এতক্ষণ ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন রাজীববাবু, হঠাৎ তাড়াতাড়ি উঠে বসে ছোঁ মেরে কাপটা সরিয়ে নিলেন।

থাক আর লাগবেনা, চা আমার খাওয়া শেষ।

মানে? তাহলে কাপে ওটা লাল লাল কি?” অবাক হয়ে বলে রিতু।

“তোমার অত জেনে লাভ নেই, তুমি বরং আমায় কটা বরফ এনে দাও।”

ব্যাপারটা বুঝতে আর এক মুহূর্ত সময় লাগেনা রিতুর। মাথাটা ফুটন্ত জলের মতো গরম হয়ে ওঠে তার।

“আপনি আবার এসব ছাইপাঁশ খাচ্ছেন? ঘরে আপনার নাতি আছে ওর কথাটা অন্তত ভাবা উচিত ছিল আপনার!”

পাপান ওর দিদুনের সাথে বেরিয়েছে, আসতে দেরি হবে,” কথাটা শেষ করেই কাপে এক চুমুক দেন রাজীববাবু, সাথে সাথে নাক টা কুঁচকে ওঠে তাঁর।

“ওহ্ তার মানে সবটা জেনেই প্ল্যান করে আপনার এই আয়োজন।”

একদম জোলো, বরফ ছাড়া এ জিনিসের কোনো স্বাদ নেই,” রিতুর কথায় কান দেন না রাজীব ।

“মা জানতে পারলে কিন্তু আর রক্ষে থাকবেনা। তখন কিন্তু আমায় একদম ডাকাডাকি করবেন না। আপনাকে বাঁচাতে গিয়ে পরে আমায় মা আর আপনার ছেলের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।”

“রূপকের কথা বাদ দাও, ও আমাকেই সম্মান দিল না কোনোদিন..”

“বাবার মাতলামি টাকে ঘেন্না করা মানে বাবা কে অসম্মান করা নয়।”

“না তা নয়..”

“তবে ?”

“অত জানিনা বাপু, তুমি বরং আমায় কটা বরফ এনে দাও, এই শরীরে আমি এত বকতে পারিনা, হাঁফ ধরে।”

“শরীর যখন খারাপ তো এসব খান কেন? সুস্থ থাকতে ইচ্ছা করেনা?”

“আর শরীর, বুড়ো বয়সে ছেলে দুরছাই করবে, বউ গাল দেবে, এভাবে বাঁচার থেকে এই লাল জলে মিশে থাকা ভাল। বড় শান্তি।”

কেন বাজে কথা বলছেন বাবা? এরপর যদি পেটের ব্যথায় কাতরান আমি কিন্তু ওষুধ এনে দেবনা। আর রূপক কে বলে যে লাভ নেই সেটা আপনি জানেন আশাকরি,” বলে কাপটা প্রায় ছিনিয়ে নেয় রিতু।

ব্যাটারা বলে আমি নাকি সারাজীবন ওদের জ্বালিয়ে মারলাম। তুমিই বল, রূপক তখন ক্লাস ১১, চাকরিটা চলে গেল আমার, টাকার অভাবে মেয়েটার চিকিৎসা করাতে পারলাম না। আজও দেওয়ালে ঝোলানো তার ছবিটার দিকে তাকাতে পারিনা, আর তোমার মা বলে আমি নাকি শুধু নিজেরটাই দেখেছি। কার মাথা ঠিক থাকে বল। তাই নেশা করি, ভুলে থাকতে। চেষ্টা তো করলাম রূপক টাকে যতদূর পড়ানো যায় কিন্তু ও যদি গুন্ডাদের দলে ভিড়ে গিয়ে প্রোমোটিং এর ব্যবসা শুরু করে সেই দোষটাও কি আমার? আজ যে তার এই বুড়ো বাপটার জন্মদিন সেটা কি মনে আছে ওদের কারোর? আজ আছি কাল নেই, হয়তো এইবারেরটাই আমার শেষ, একটু কি সময় দিতে পারত না ওরা আমায়?” এই বলে রাজীববাবু তার অবসন্ন শরীরটা এলিয়ে দেন চেয়ারে।

“জন্মদিনের সেলিব্রেশান তো ওগুলো ছাড়াও করা যায় তাই নয় কি ?”

“ওগুলো ছাড়া হয়তো হয়.. তবে সঙ্গী ছাড়া হয়না।”

“দাঁড়ান,” বলে নিচে নেমে গেল রিতু ।

খানিক বাদে যখন এল তখন তার হাতে একটা ট্রে, তাতে ছোট্ট একটা বাপুজি কেক, ফল কাটার ছুরি, একটা ছোট মোমবাতি আর দু”কাপ চা। একটা দুধ চা আর একটা লাল চা।

ট্রে টা রাজীববাবুর সামনে রেখে কেকের উপর মোমবাতিটা জ্বালিয়ে দেয় সে।

“নিন এবার ঝটপট কেটে ফেলুন তো কেকটা।”

মোমবাতির আলোয় চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে রাজীববাবুর। এক ফুঁ দিয়ে মোমবাতিটা নিভিয়ে কেকটা কেটে ফেলেন তিনি, পাশে রিতু গুনগুন করে গাইতে থাকে-

“হ্যাপি বার্থডে টু য়্যু……”

চা এর কাপ হাতে তুলে দিয়ে সে বলে, “বেশি করে লিকার দিয়েছি, যাতে একটু তেঁতো লাগে, ওই ছাইপাঁশ গুলোও তো তেঁতোই।”

গালের কোণে একচিলতে হাসি ফুটে ওঠে রাজীববাবুর। হাত তুলে কাপে কাপ ছোঁয়ায় দুজনে আর সমস্বরে বলে ওঠে-

“চিয়ার্স..”

 

 

Author ~ Subhra Raha. Born on 27th April, 1992, at Kolkata, West Bengal. A B-Tech Graduate from St. Thomas College of Engineering & Technology, Kolkata, currently working at Cognizant as a Programmer Analyst. Besides reading and writing stories and poems, Subhra also loves to play Cricket. Cooking and Travelling are also there among his hobbies. Connect him at – [email protected] or follow him @subhra.raha.35

 

প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ wordpress.com

প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds

11 comments

Comments are closed.