সাত্যকী ও মিলি
রবিবার বাজার থেকে ফিরে সাত্যকী লুচি-আলুর তরকারী সহযোগে বিলাসিতায় মগ্ন। খবরের কাগজ দেবার ছেলেটাও এরইমধ্যে দুটো বাংলা আর একটা ইংরাজী কাগজ দিয়ে গেছে। আর সাত্যকীর মা-বাবা সেগুলো নিয়েই ব্যস্ত। না তাঁরা আপাতত দেশ-বিদেশ-খেলার খবর কিছুই দেখছেন না। শুধু প্রত্যেকটা কাগজের পাত্র চাই পাতার দিকে নজর আর হাতে লাল কালির পেন। সম্ভাব্য পুত্রবধুর সন্ধানে পছন্দ মতন জায়গাগুলি গোল্লা পাকিয়ে রাখছেন। মা বলেন লাল রং খুব শুভ।
সাত্যকী ব্যাপারটা বেশ এনজয়ই করে। লাল কালির দাগগুলো দেখে তার স্কুলের পুরোনো দিনগুলোর কথা মনে পরে। টিচাররা যখন পরীক্ষার খাতায় লাল দিয়ে V. Good লিখে আন্ডারলাইন করে দিতেন – আনন্দে চোখদুটো ঝকঝক করতো। বাড়ীতে ফিরে খাতা দেখে বাবা-মা জড়িয়ে ধরতেন। আরো ভালো করার উৎসাহ দিতেন।
পরীক্ষায় ভালো করতে করতে সাত্যকী একদিন চাকরী জীবনে প্রবেশ করলো। IAS পাশ করার পর এখন তার রোজকার গন্তব্য নবান্ন। অফিস থেকে লাল বাতি লাগানো গাড়ী যখন নিতে আসে, পাড়ার লোকও তাকিয়ে দেখে – যেন সম্মান জানায় তার শিক্ষা আর উন্নতিকে।
বিয়ে করবো-করবো না এই দোলাচাল কাটিয়ে সে এখন ছাদনতলায় বসার জন্য রাজী। বিয়ে নিয়ে নিমরাজী থাকার একটাই কারণ ছিল – সর্ষে। তার পায়ের তলায়। সুযোগ পেলেই সে ছুটে যায় পাহাড়ে। ভোরের সূর্যের লাল আভা যখন পাহাড়ের চূড়োয় পরে, তখন যেন আর অন্য কিছু মাথায় থাকেনা। সেই স্নিগ্ধ লাল রং চারিদিকের সঙ্গে তার মনের ভিতরটাও ছুঁয়ে যায়।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিনও এসে গেল। বাড়ির লোকদের নিয়ে কলেজস্ট্রিট, গড়িয়াহাট, শপিং মলগুলোয় ঘুরে ঘুরে কিভাবে যে মাঝের আটটা মাস কেটে গেল – নিজেও বুঝতে পারেনি। বৌভাতের লাল লাহেঙ্গা কিনতে গিয়ে মিলির সঙ্গে আরো খানিটা সময় কাটাতে পেরেছে সে। মনে হয় আর খানিকটা জানা গেছে একে অপরকে। অনেক কিছু নিয়েই তাদের আলোচনা হয়েছে ইতিমধ্যে। ভাবের আদান প্রদান ঘটেছে।
অফিসের বন্ধুরা সাত্যকীকে খোঁচানো শুরু করেছে আসন্ন থাইল্যান্ডের দিনগুলো নিয়ে। অনেকেতো আবার অন্যরকম জোকস পাঠাচ্ছে whatsapp এ। তার অনেকগুলো পুরোটা পরে শেষ করার আগেই, লজ্জায় লাল হয়ে ডিলিট করে দেয়। পাড়ায় যে দু একজন খুব ক্লোজ ফ্রেন্ডস আছে, তারা আবার আরো এককাঠি এগিয়ে। রক্ত রাঙা প্রথম দিন নিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা আর গল্প শোনায়। অফিসের বড়বাবু হলেও বিবাহ সম্পর্কিত অনেক উষ্ণতা তার কাছে পরিষ্কার নয়। সে অবশ্য তা নিয়ে কোনো বেশী মাথাও ঘামায়নি। তবে আগামী দিনগুলোর কথা ভেবে তার মনেও রং লেগেছে।
শুভদৃষ্টির সময় মিলিকে একদম অন্য সাজে দেখে সে কিছুই চিন্তা করতে পারেনা। রানী রঙের বেনারসী, রজনীগন্ধার মালা, কপালে চন্দনের কারুকাজ, হাতে লাল গাছকৌটো – সব মিলিয়ে সে যেন স্বপ্ন দেখছে। সিঁদুর দানের সময় মিলিকে সে মনে মনে একদম আপন করে নেয়। কপালভরা লাল সিঁদুর, নাকের ওপর কিছু সিঁদুরের ছোয়ায় মিলিকে তার পরিপূর্ণ মনে হয়। যেন বিশ্বাসই হয়না সে আর মিলি এখন থেকে স্বামী স্ত্রী।
উলুধ্বনি, লোকজনের হাসি, গমগমে আওয়াজের মাঝে হঠাৎ চতুর্থদিন দেখা হবার কথা মনে পরে। সেদিনই মিলি তাকে অতীতের কিছু ধূসর কথা জানিয়েছিল। সেদিনই সে জানতেপেরেছিল দুর্ভাগ্যক্রমে মিলির জীবনে সেই প্রথম পুরুষ নয়। অমরেশ নামটা সেদিনই সে প্রথম শুনেছিল মিলির কাছে। এবং মিলি কিছুই লোকায়নি তার কাছ থেকে। থাইল্যান্ডের দিনগুলো তার জীবনে প্রথম হলেও মিলির জীবনে নয়।
শাঁখের কড়ার আওয়াজে ফিরে আসে সে। মিলির মুখের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যাওয়া যায়। তার চেয়েও ভালো লাগে মিলির মন। সে লোকায়নি কিছুই, সাত্যকীর প্রথম দেখাতেই তার ওপর টানের কথা বুঝেও সে কিছু এরিয়ে যায়নি। বরং সাত্যকীকে অনেকবার ভেবে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
ঘটের ওপর লাল চেলীতে বাঁধা দুটো হাতের দিকে তাকিয়ে সাত্যকী আশায় বুক বাঁধে মিলিকে সব সময়ের জন্য কাছে পাবার। আশা তার মিলিকে নিয়ে – ভালোবাসা নিয়ে – তার কাছে এখন ভালোবাসার রং লাল।
লেখক পরিচিতি ~ শান্তনু দাস
প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ paatropaatri.in
প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds
9 comments
khub sundor lekha, khub misti ekta golpo!!
ধণ্যবাদ অমৃতা, আরো নতুন কিছু লেখা আসতে চলেছে। পড়তে থাকুন।
Mili aakhir mil hi gayi !! 😀
Jokes apart, a sweet and explicit write-up…..
কাকার কলম করেছে কামাল
হিমের পরশে এক মুচমুচে খাস্তা সকাল !!
Jodio ami age Porechi taao ar ek baar porlaam… Ato lucid writing khub Kom e Porte PABA jae … 👍👍👍
Ashadharon, so well written. Wish you all the best so that you come with amazing creative writing.
Apnake onek dhonyabad amader pashe takbar jonno ..
Alpo site arokom misti premer golpe bangali mojbe e….. shantanu da abar oshadharan…. 🙂
aree kaka…jata too… interesting..wish you more writing.
Comments are closed.