স্বপ্নপূরণ

Friends, Marriage, Story, বাংলা

ঘুম থেকে উঠে তড়িঘড়ি প্যাকেট হাতে রিয়া ছুটেছিলো বাথরুমের দিকে। কিন্তু আজও কার্ডে দুটো দাগ দেখতে পেলোনা। প্রায় চার মাস দীপ্ত আর সে আশায় বুক বেঁধে আছে। এমন সময় বাথরুমের বাইরে থেকে ডাক আসে – “মাম, মাম“।

দরজা খুলতেই ঋজু জড়িয়ে ধরে। দেখতে দেখতে তিনটে বছর কেটে গেছে। এই ফুটফুটে ছোট্ট ছেলেটা এসেছে তাদের জীবনে। ঋজু হবার আগে তারা ভাবতো যেন একটা মেয়ে হয়। ফাইনাল ইউ এস জির দিনটা আজও মনে আছে। ডাক্তারবাবু সরাসরি কিছু না বললেও ওরা বুঝতে পেরেছিল একটা খোকা আসতে চলেছে। ঋজু হবার পর ওদের জীবন আনন্দে ভরে উঠেছে। ওরা নিজেদের ভালোবাসা চোখের সামনে বেড়ে উঠতে দেখছে। এই আনন্দের মাঝে মনের এক কোনে আশা রয়ে গেছে যদি একটা ফুটফুটে মেয়ে আসে ওদের মাঝে।

দীপ্ত বরাবরই যথেষ্ট প্রাকটিক্যাল। দুজনেই চাকরি করে – তাই দুটো বাচ্চার ঝামেলা সামলানো নিয়ে সে যথেষ্ট চিন্তিত।

ছেলের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পায় রিয়া। ঋজুকে কোলে নিয়ে এগিয়ে যায় রান্নাঘরের দিকে। ছেলেকে দুধ খাইয়ে, রোজকারের মতো চা বানিয়ে দীপ্ত আর রিয়া দুজনে সোফায় বসে। কিন্তু ছেলের বায়নায় দীপ্তকে সোফা ছেড়ে উঠতে হয় – খেলনাটা কিছুতেই বসাতে পারছেনা ঠিক করে।

রিয়া পেপারটা তুলে নেয়। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে একটা খবরে নজর আটকে যায়। অনাথ আশ্রমে বাচ্চা মেয়েরা কতো লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে – নিয়মিত। বুকের ভেতরটা ছ‍্যাত করে ওঠে। এই শিশুদেরও নিস্তার নেই।

এরই মাঝে কলিং বেলটা কর্কশ ভাবে বেজে ওঠে। দরজা খুলতেই রত্না ঢুকে পরে। “বৌদি কি রান্না হবে?” সারাদিন বাচ্চাটার দেখাশোনার সাথে রান্নাটাও করে রত্না। কোনোরকমে কিছু খেয়েই তৈরী হয়ে নেয় দুজনেই অফিস যাবার জন্য। ছেলেকে আদর করে দুজনেই একসঙ্গে বেড়িয়ে পরে।

এভাবেই সুখে দিনগুলো কাটতে থাকে। তিনজনে মিলে হাসিখুশি সময় কথা থেকে কেটে যায় টেরই পাওয়া যায়না।

আজ আবার অন্য আরেকটা সকাল। রিয়া শান্তভাবে চোখ খোলে। পাশে নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে দুটো সুন্দর বাচ্চা। কার্ডের লাইনদুটোর আশা পূর্ণ হয়েছে মাস পাঁচ ছয়। সেদিনের পেপারের অনাথ আশ্রম থেকে দুজনেমিলে নিয়ে এসেছে বছরখানেকের পুঁচকে মেয়েটাকে। সাধ করে নাম রেখেছে ঋধিমা। ঋজুর খেলার সাথী, আর এখন সে দীপ্তর প্রাণপাখি। আর রিয়ার বুকের কোনের ছোট্ট আশা।

লেখিকা ~ সঙ্গীতা দাস

প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ consumer-voice.org

প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds

2 comments

Comments are closed.