জাগতে রহো

Facts, Freedom, Friends, Ideas, Short Story, Story, বাংলা

অনেক চিন্তা করেও আর লোভ সামলাতে পারলাম না। ঠেলাগাড়ি থেকে আড়াইশো গ্রাম টোপাকুল কিনেই নিলাম, সঙ্গে বাড়তি ঝালনুন। ছোট থেকে শুনে আসছি সরস্বতীপুজোর আগে কুল খেলে স্কুলের পরীক্ষায় ফেল করতে হবে। কোনোদিনও সাহস হয়নি নিয়ম অবহেলা করার। যতটা না বাবার মারের ভয়, তার চেয়েও বেশি লজ্জার কথা ভেবে। মাঠের বন্ধুরা দুদিন খিল্লি করবে, তারপরে সব ঠিক। কিন্তু ক্লাসের আর কোচিংয়ের মেয়েগুলো যে আর ফিরেও তাকাবেনা। ক্রিকেট খেলায় ওপেনার হওয়ার দরুন মহিলাকুলের মাঝে যে সামান্য খ্যাতি জোগাড় করতে পেরেছি, সেটুকু ফানুসের মতো উড়ে যাবে। পরে বয়স বাড়লেও আর প্রথাটা ভাঙা হয়নি। কেমন যেন দরকারও পরেনি।

কিন্তু আজ আর সে খ্যাতি নেই। বারো ক্লাসে কোনো মতে পাস করে কোনো কলেজের প্রথম তিনটে লিস্টের একটাতেও নাম উঠলোনা। গাড়ি কারখানায় অনেক তদ্বির করে বাবা একটা কাজ জুটিয়েছিলো আমার। সেই কাজ করতে করতে বয়স গেলো আরো খানিকটা বেড়ে। যত দিন গেলো আরো কত প্রথা, সংস্কার বাসা বাঁধলো মনের মাঝে। শনিবার করে মন্দিরে এগারো টাকার পুজো দিতে দিতে কখন যে রাস্তার পাশের মন্দির দেখলেই জোড়হাত দুটো কপালে উঠে যেত, নিজেই টের পেতাম না।

মাঝে বাবা ছেড়ে চলে গেলো মায়ের সঙ্গে দেখা করতে, চিরদিনের জন্য। আর বাড়িময় ফটোগুলোর সামনে ধুপ ধুনো দেবার দায়িত্ব দিয়ে গেল আমায়। প্রথাগুলো আরো যেন জাঁকিয়ে বসলো। কিছু বুঝতে পারার আগেই সংস্কারগুলো কখন যেন কু হয়ে গেলো। খানিক দিন পর বিয়েও করলাম, সংসারও চলতে লাগলো। দৌড়ালোনা, তবে গড়িয়ে চলাটাও তো চলা। ক্রমে হাতে চড়লো গ্রহ শান্তির শেকড়, কালসর্পের তাবিজ, আর তাকভর্তি পঞ্জিকা। না সংসারে এলো অর্থ, না মনে এলো শান্তি।

এতো কিছুর মাঝে গাড়ি কারখানাটা গেলো বন্ধ হয়ে। তারপর এদিক সেদিক অনেক চেষ্টার পর, স্টেশন চত্বরে একটা হোসিয়ারীর দোকান দিলাম। দোকান মানে রাস্তার পাশে প্লাস্টিক পেতে আর রেলের দেয়ালে হ্যাঙ্গার টাঙিয়ে মাল বেচা। টুকটাক বিক্রী করতে করতে কিছু বাঁধা খদ্দের জুটলো। বাড়িতে হাসি ফুটলোনা। আর ফুটবেই বা কি করে, প্রতিদিন ভাত আর সেদ্ধ ডাল, আর রবিবার করে মাছ খেয়ে কি হাসি ফোটে।

দোকান বন্ধ করে ফেরার সময় ঠেলাগাড়িটা দেখতে পেলাম। আর কুলগুলো কিনে ফেললাম। সংস্কার মেনে তো অনেক হলো, এবার না হয় একটু চালিয়েই খেলি। ক্রিকেট খেলাটা একটু ঝালিয়ে নি এই মাঝ বয়সে এসে। এখন যদি একটু রান তোলা যায়। এ বছরটা প্রথা ভাঙার। শুরুটা কুল দিয়েই হোক। মুখ থেকে একটা বীজ থু করে ফেললাম রাস্তার পাশের ড্রেনে।

লেখক পরিচিতি ~ শান্তনু দাস

প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ Flickr.com

প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds

One thought on “জাগতে রহো

  • aisshaabaash……daaroon portrayal…………lekha nie to kono kotha hobeina , tobe idea ta khaashaa !!!

Comments are closed.