মুক্তি
আমার নাম তিতি।
একটা লোহার খাচায় সারাদিন বন্দী থাকি আমি। আমার মালিক এক মস্ত ব্যবসায়ী। প্রাচুর্য এর কোনো অভাব নেই তার। এরমই কিছু বড়লোকদের শখ মেটানোর মূল্য দিছছে আমার মুক্ত আকাশের স্বাধীনতা।
আমার সমব্যথী শুধু একজন, মালিকের পুত্রবধু নববিবাহিতা মিঠু। প্রদীপের আলোর মত উজ্জল ওর রূপের ছটা। অপরাধ শুধু, এক অসচ্ছল দরিদ্র পরিবারে ওর জন্ম।
এ বাড়িতে মিঠু একটা সুসজ্জিত আসবাবের মতো। আত্মীয় সজন, পাড়া প্রতিবেশী সকলের কাছে সুন্দরী বউকে দেখানো হয় বাহবা পাবার জন্য। এরা ওর খাওয়া পড়ার কোনো অভাব রাখেনি। শুধু হারিয়ে গেছে অষ্টাদশীর কৈশোর। গ্রামের আল পথ দিয়ে আর দিগন্তরেখার দিকে ছুটে যায় না মিঠু, ঝিলের জলে ঢিল মেরে ঘূর্ণি খেলে না, বুড়ো বট গাছের দোলনা টায় আর চড়া হয়না ঘন্টার পর ঘন্টা, চাটুজ্জেদের ফলের বাগান থেকে আম, জাম, কূল আর চুরি করে না সে। এখন কাচের ডাইনিং টেবিলে হরেক রকম ফল সাজানো। তবু খেতে ইচ্ছেই করেনা মিঠুর।
সুন্দরী বউ তাই সবদাই কড়া নজরদারি মিঠুর ওপর। কারো বাড়ি যাবেনা, কারোর দিকে তাকিয়ে হাসবে না। কোথায় কি বলবে, কতটা বলবে, সবকিছুর নিয়ন্ত্রক ওর তিরিশ বছরের সামী।
মাঝে মাঝে মিঠুর ইচ্ছে করে সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে যায়। ঠিক তখনি মনে পড়ে যায় ছোট ভাই বোন গুলর মুখ। এদের দয়ায় ওরা এখন দুবেলা পেট পুরে খেতে পায়। মাকে আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হয়না।
আজ মিঠু বাড়িতে একা। সবাই গেছে এক শ্রাদ্ধবাড়ি। অনেক দিন পর বারান্দায় এসে দাড়ায় মিঠু। রেলিং এ দুটো হাত দিয়ে বুক ভরে একবার নিশাস নেয়। তারপর আমার খাচাটা খুলে দিয়ে বলে, “যা পালিয়ে যা, ওই দূরের নীল আকাশটা তোকে ডাকছে। তোর মুক্তিতেই আমার আনন্দ।”
লেখিকা পরিচিতি ~ প্রাপ্তি চাট্টার্জী
প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ Motionelements
প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds
One thought on “মুক্তি”
prochesta ta valo laaglo
Comments are closed.