সুপ্তনীড়

Childhood, Friends, Nostalgia, আনন্দ আকাশ, বাংলা

ভাঙা বাড়ির ইঁট – পাথর চারপাশে ছড়ানো, ধুলো তে চারপাশ ঢেকে গেছে । অনুপম নাকে রুমাল চাপা দিতে দিতে বললো , –
“কি দরকার ছিল মা তোমার এখানে আসার , আর এখানে ছিলই বা কে ? মামা মারা যাবার পর সাপ খোপের আড্ডা হয়েছিল একটা। এই প্রোমোটার  যা দাম দিলো আর কেও দিতো না । এই দেখো তুমি কাঁদতে শুরু করলে !!”
” জানিস খোকা , এখানে একটা বট গাছ ছিল, আর জানিস এই উঠানটাই দুপুরে আমার মা , কাকিমা বসে গল্প করতো, আমার একটা ভাল্লুক পুতুল ছিল , তার নাম দিয়েছিলাম টুসি, চিলেকোঠার ঘরে আমি ওই টা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা খেলতাম । তারপর , একদিন জানি না কিভাবে ওটা হারিয়ে গেল – । ”
মায়ের কথার মাঝেই অনুপম বলে উঠলো- “ভাল্লুক ? তোমাদের সময় টেডি ছিল নাকি ? জানো মা আজ টেডি ডে ।” – আসলে অনুপম প্রসঙ্গ চেঞ্জ করতে চাইছিলো , যাতে মা আর না কাঁদে | ওর ও মন ভারি হয়ে এসেছে , ছোটোবেলার মামাবাড়ির স্মৃতি ও এই বাড়ির সাথেই মিশে ধুলো হয়ে গেল ।

হাঁটতে হাঁটতে ওরা বাড়ির অন্য দিকে চলে এসেছে ।

“টেডি কিনা জানতাম না , একটা পুতুল বলেই খেলতাম ।। ” – ওর মা বললো  |

বাড়ি ভাঙা হওয়াতে পাশের বস্তির কিছু বাচ্চা জড়ো হয়েছে , ভাঙা চোরা সরিয়ে সরিয়ে দেখছে । একটা কালিঝুলি মাখা পুতুল বেরিয়ে এসেছে ভাঙাচোরা থেকে  , সেটা ঘিরে জটলা বাচ্চাগুলোর । হঠাৎ মা বলে উঠলো -” এই তো আমার টুসি ।”

“তুমি কি পাগল হয়েছো মা, সে পুতুল কি আর আছে , কতদিন আগের কথা , ওটা নিশ্চয় অন্য পুতুল ।”-অনুপম বললো ।

“না রে , আমি একটা লাল ফ্রক বানিয়ে দিয়েছিলাম টুসি কে , মা লাল উল দিয়ে লিখে দিয়েছিলো টুসি নাম টা ।”
পুতুল টা ভাঙাচোরা থেকে তুলে এনে মা কে দিলো অনুপম । এক ছোট্ট মেয়ের মতো চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো ওর মায়ের ।
“হ্যাপি টেডি ডে মা ।” – হেসে বললো অনুপম ।
মায়ের মুখে হাসি দেখা দিল ।।

 

Author – আনন্দ 

Raw Cover Image: prweb.com

Cover Image Design: Anari Minds