আমার ডায়রী

Childhood, Friends, Humor, Marriage, Nostalgia, Short Story, Story, বাংলা

ছেলেবেলায় শুনেছিলাম গুণীমানুষজন ডায়রী লিখতেন। মানে নিজেদের রোমাঞ্চকর প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনা কাগজে কলমে বেঁধে রাখতেন।

তা এসব শুনে আমারও ধারণা হলো ডায়রী লেখা একান্ত কর্তব্য একটি কার্য্য। অন্যথা গুণীজন হওয়া যায়না। বালখিল্য ধারণা আরকি। উদ্যম নিয়ে একটা সুন্দর দেখতে ডায়রী কিনে আনলাম। (ডায়রীর টাকা কিভাবে জোগাড় হয়েছিল, সে তত্ত্বকথা এখন বলা যাবেনা। গুরুর বারণ আছে।)
লাল ভেলভেটের কভার, ১৮৩ টা ধবধবে সাদা পাতা। পাতাগুলো এতো সুন্দর যে কালির আঁচড় দিতে বুকে বাঁধে। কিন্তু বিখ্যাত আমায় হতেই হবে। ক্লাস তখন সেভেন। উদ্যম তো সোডা ওয়াটার, সব সময় ভুর ভুর করছে। সুতরাং মনোবেদনা সরিয়ে রেখে পেন বুলিয়ে নিজের নামটা খোদাই করে দিলাম প্রথমেই। বলা তো যায়না, বিখ্যাত হয়ে যাবার পর অন্য কেউ যদি আমার ডায়রী লোপাট করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়। তাই ভবিষ্যতের কুটিল লোকের মুখ আগেই বন্ধ করার বন্দোবস্ত করে ফেল্লাম।

বেশ লেখক লেখক একটা ফিলিং নিয়ে প্রথম সপ্তাহটা কেটে গেল। পাতাগুলো যেন আরেকটু বড় হলে ভালো হতো। নিত্যদিনের এত ঘটনা যে জায়গায় কুলানো যায়না। সেই ঘুম ভাঙ্গানোর সময় আমার কান ধরে মায়ের টান থেকে শুরু করে রাতে টর্চলাইট জ্বালিয়ে গল্পের বই পড়া। মাঝে ইতিহাসে খাবি খাওয়া, স্কুলে খেলার মাঠে উল্টে পরা, রাস্তায় সাইকেল রেস, আউট হলে নো বল – কিছুই বাদ যেতনা।
দিনের কোনো ঘটনাই হাতে ধরে বাদ দিতে পারতাম না, পাছে ভবিষ্যৎ পাঠক আমার রোমাঞ্চকর জীবনের মহান ঘটনাগুলো থেকে বঞ্চিত থেকে যান।

এরোম ভাবে চলছিল ভালোই। মুশকিল শুরু হলো যত ক্লাস বাড়তে লাগলো। মানে নাইনে উঠে দুপুরের সিনেমার ঘটনাতো আর লিখে রাখা যায়না। আর স্যারের কোচিংয়ের মনোকষ্টই বা সব বলি কি করে। কিন্তু মুশকিল আরো ছিলো, যত দিন গেল সব রোমাঞ্চকর ঘটনা যেনো দৈনন্দিন জীবন থেকে কর্পূরের মতো উবে যেতে লাগলো। ডায়রির পাতা ভরাট করা যে কি কষ্ট, তার থেকে পাতা কেটে সিগারেটে ভরা অনেক সোজা তখন। (দেখুন সব কথা সোজা সাপ্টা বলা যায়না। মানে বললেও হজম করা যায়না। আর এইসব এখনো না বুঝলে আপনি বরং কপালভাতি করুন।)
কাজেই লেখা হলো বন্ধ।

আর এখন বুঝতে পারি, লেখা বন্ধ হয়ে ভালোই হয়েছে মশাই। ২ ৩ বছরের ইতিবৃত্তি ঘেঁটেই যা অবস্থা, তাতে বউয়ের সামনে মুখে রুমাল বেঁধে থাকতে হচ্ছে। আর তাছাড়া, কি বলবো ডায়রী লিখে আর লাভই বা কি – কথায় কথায় এমনিই শুনতে পেরে যাই আমি অমুকদিন ওই কাজটা করিনি, অমুকদিন ওই কথা বলেছিলাম, সাত মাস ষোলো দিন আগে নাজানিয়ে ওপিয়ামে মাটন পাটিয়ালা খেয়েছি।

বিখ্যাত আর হওয়া হলোনা, এইটাই যা দুঃখ। যাই বাজারটা করে নিয়ে আসি, না হলে আবার দু সপ্তাহ সাড়ে সতেরো ঘন্টা বাদে বাজার না যাবার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

লেখক: শান্তনু দাশ

Picture: https://www.ofm.co.za

Picture design: Anari Minds