ঢিলে ইস্ক্রুপ

Conversation, Friends, Love Story, Short Story, বাংলা

– এই ভাবে কাস্টমার ঘোরাচ্ছ দিন দিন, বলি দাদু চক্ষুলজ্জা বলে কি কিচ্ছুটি রাখোনি তোমার?
– দাঁড়াও বাবা দাঁড়াও। সবাই যদি ঘোড়ায় জিন দিয়ে আসো তাহলে আমি কি করে সামলাই? আমি কি যেমন তেমন করে কাজ….
– আহা সে কথা নয় গো ঠাকুদ্দা, সে কথা নয়। তোমার হাতের তারই আলাদা, সেই জন্যেই না…
– ঠাকুদ্দা কি গো বিষ্টুবাবু !! বলি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছো একবার? বলি মেঘে মেঘে তোমার কি কম হলো?
– আহা হা চটো কেন চাচা… তুমি হাত চালালে কত্ত জোয়ান মদ্দ ফেল পড়ে যাবে… আসলে আমার জিনিস গুলো আজকেই….
– আজকেই? সে কি গো? আজ কি করে হবে? যন্ত্রগুলোর কয়েক জায়গায় তেল দেওয়া বাকি, কিছু ইস্ক্রুপ ঠিকঠাক টাইট আছে কিনা দেখতে হবে… আর…..
– দেখো বুড়ো, এই নিয়ে তিন হপ্তা তুমি এই য়্যাক কথা বলে ঘোরাচ্ছো…. বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে… আমি এখনই আমার মাল নিয়ে চললুম…এই.. কে আছিস??
– ওই দেখো দেখো দেখো…. খুঁতো জিনিস বাজারে ছাড়তে নেই বিষ্টুবাবু। বুড়ো মানুষকে আর একটু সময় দাও, নইলে যন্তরগুলো সব খুঁতো মাল হয়ে রয়েছে..
– দেখো ব্রহ্মাদাদা, অনেক সয়েছি, আর নয়। এর পর কিন্তু পেমেন্ট দিতে ঝুলিয়ে দেবো। কুবের তোমার জমা করা চেক আটকে দেবে, সেটা ভাল হবে? আমার চাপ আছে, আজই নেবো ডেলিভারি।
– আজই?
– হ্যাঁ আজই, ও দিকে ব্যাটা গেঁজেল ভোলানাথ বসে আছে তার জাংকইয়ার্ড নিয়ে। আমার অপারেশনাল স্ফিয়ার থেকে বেরুলেই খপাত করে যন্তর গুলো ধরে ক্রাশারে ভরবে।
– কিন্তু খুঁতো মাল….
– কি খুঁতো খুঁতো করছ বলো দেখি তখন থেকে?
– না মানে বিষ্টুবাবু, সবই ঠিক আছে, কেবল সব কটা যন্তরের…
– উফফ, মিস্তিরির স্বভাব আর গেলনা। যন্তর আবার কি হে? বলো মানুষ। ওগুলোর নাম মানুষ।
– ওই হলো, মানে সব কটা মানুষের জয়েন্টে জয়েন্টে ভাল অয়েলিং হয়নি, বেশী ব্যবহারে ক্ষয়-বয় একটু হবে
– সে না হয় হলোই। এমনিতেও মরার পর ওই ভোলার জাংকইয়ার্ডেই ঢুকবে। আর কিছু?
– না, ওই ইমোশনের ইস্ক্রুপের লট টা ডিফেক্টিভ ছিল।
– তো?
– যন্তরগুলো তো..
– আবার?
– মানুষ গুলো তো দু রকম, কারন ওই অটোম্যাটিক নিজেরাই নিজেদের প্রোডাকশন চালাবার কথা।
– ও বাবা, ওই খানে……. মানে নুনু… ইয়ে ঢিলে? খুলে আসবে?
– কি যে বলো না বিষ্টুবাবু, মুখের আগল নেই। না না, ওই ইস্ক্রুপ না। ইমোশনের বলছি না? এ গুলো অন্য, ছোট ইস্ক্রুপ চার ঘাটের। হার্টের গায়ে লাগে।
– হার্ট ফেল করবে? ও ঠিক আছে…ম্যানেজ করে নেবো…
– ধুত্তেরি, এ তো মিস্তিরির চেয়েও মাথামোটা দেখছি…. যা বলছি শোনে না, খালি বক বক…
– চটো কেন? বলো বলো কি হবে…
– আরে ওদের ওই মদ্দা আর মাদীর মধ্যে যে বুক ধুকধুক, মন উড়ুউড়ু হবার কথা…
– প্রেম
– ওই হলো। ওইটে একটু গড়বড় করবে। মানে আগে থেকে বলা খুব মুশকিল কোথায় কখন সিগনাল যাবে।
– ওঃ এই ব্যাপার?
– এটা একটা বড় খুঁত গো। বেচারারা বুঝবেই না কখন কোথায় কার সঙ্গে…
– তাতে তোমার কি দাদু? সে ওদের সমস্যা…..
– ধুস…. আরে ঠিক ঠাক না হলে প্রোডাক…
– এমনি হয় না আবার ইংরিজি…ও আমি আমার শালী কে বলে দেবো। ওর ভারি বুদ্ধি, কিছু একটা করে দেবে।
– কে? সরস্বতী? কি করে দেবে?
– কিছু একটা। আরে ওর পূজো টুজো যখন হবে, একটু কলকাঠি নেড়ে….
– আর যে সব বেয়াড়া যন্তর পূজো আচ্চার ঢপবাজি মানবে না?
– ও বাবা, বেয়াড়া মানুষ ও তৈরি করেছ? সত্যি ঠাকুদ্দা, বাপের জন্মে তোমার মত মিস্তিরি…
– ঠাকুদ্দা যখন বললে, একটা কথা মাথায় এলো
– বলে ফেলো
– ওই আমাদের বন্ধু ছিলো জেহোবা দ্য গড, ইশকুল পালিয়ে একসঙ্গে বিড়ি খেতুম। ওর পোলাপান…. ভেলু…
– কে আমাদের ভ্যালেন্টাইন দা? ভারি ভাল…
– কিচ্ছুটি জানোনা বিষ্টুবাবু। ভেলুর মাথায় ভারি ফিচেল বুদ্ধি। বাকি বেয়াড়া মানুষ গুলোর ঢিলে ইস্ক্রুপের ব্যবস্থা ও ই করে দেবে

© সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়