পাঠকের চোখে – দ্য ফলেন (The Fallen)

Book Review, Reviews, বাংলা

বই ~ #দ্য_ফলেন (The Fallen)
লেখক ~ #ডেভিড_বলডাচি (David Baldacci)
সিরিজ ~ অ্যামোস ডেকার থ্রিলার
প্রকাশক ~ Pan Books
প্রথম প্রকাশ ~ ২০১৮ (ইংল্যন্ড)
পৃষ্ঠা সংখ্যা ~ ৫৯০
মুদ্রিত মূল্য ~ ৭.৯৯ পাউন্ড (আনুমানিক ৭৩০ টাকা)

পরিচয় করিয়ে দিই অ্যামোস ডেকার-এর সাথে। একজন এফ বি আই এজেন্ট, বয়স চল্লিশ, বিশাল বপু, প্রায় ছ ফুট পাঁচ ইঞ্চি লম্বা, বার্লিংটন ওহিও-তে জন্ম। কলেজ থেকেই ছিল বাস্কেটবলের নেশা। সেখান থেকে বেরিয়ে ক্লিভল্যান্ড ব্রাউন ক্লাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে খেলা শুরু। স্ত্রী ক্যাসান্দ্রার সাথে আলাপ সেখানেই। প্রফেশনাল খেলোয়াড় হওয়ার লক্ষ্যে জীবন শুরু করলেও খেলার সময়েই মাথায় একটা সাংঘাতিক আঘাত পান। সেই আঘাত থেকে জীবন কোনোমতে রক্ষা পেলেও খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি আর। তবে মস্তিষ্কে এই আঘাতের ফলে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন হয়। হঠাৎই ছবির মতো স্মৃতিশক্তি পেয়ে যান, যার গালভরা ইংরাজি নাম হাইপারথারমেসিয়া বা ফটোগ্রাফিক মেমরি। যা কিছু একবার চোখের সামনে দেখতে পান, তার ছবি মনে গেঁথে যায়। যেকোনও সময় সেটা হুবহু মনে করতে পারেন, তা সে অগুনতি নম্বরের কোনও তালিকাই হোক, বা কোনও প্যাটার্ন, বা কোনও শব্দ। তবে শুধু এই রোগটিই নয়, সেই আঘাতের ফলে ডেকারের সিনেসথেসিয়া রোগটিও ধরা পড়ে। এর ফলে বিশেষ কিছু ঘটনার সময় ডেকার চোখের সামনে বিভিন্ন রঙ দেখতে পান। যেমন কারুর মৃত্যুর সময় ওঁর চোখের সামনে বৈদ্যুতিক নীল রঙের ঝলক ভেসে ওঠে।

এইসমস্ত রোগ আসলে ডেকারের কাছে শাপে বর। আর এর ওপর ভিত্তি করেই তিনি খেলোয়াড় জীবন ছেড়ে দিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দাবিভাগে দীর্ঘদিন কাজ করার পর বর্তমানে এফ বি আই-এর স্পেশাল এজেন্ট পদে নিযুক্ত। দুষ্টের দমনকে জীবনের লক্ষ্য করে নেওয়ার পিছনে অবশ্য আরও একটা কারণ আছে। ডেকারের চোখের সামনেই নৃশংসভাবে মার্ডার হয়ে যান ওঁর স্ত্রী ক্যাসান্দ্রা আর কন্যা মলি। অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিলেও আজও ডেকার ভুলতে পারেন না সেই অভিশপ্ত দিনের কথা।

বেশিরভাগ গোয়েন্দা থ্রিলার সিরিজের মতোই ডেকারেরও একটি সাইডকিক আছেন। ভদ্রমহিলার নাম অ্যালেক্স জেমিসন। অত্যন্ত সুন্দরী, ছিপছিপে চেহারা, ফিটনেস অন্য লেভেলের। এফ বি আই তেই ডেকারের কলিগ।

“দ্য ফলেন” গল্পের প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে পেনসিলভানিয়ার একটা ছোট্ট শহর ব্যারনভাইল-কে ঘিরে। বেশ কয়েকটা কেস সলভ করার পর ডেকার আর জেমিসন এখানে এসেছেন ছুটি কাটাতে। জেমিসনের বোন অ্যাম্বার তার পরিবার নিয়ে কিছুদিন আগে পাকাপাকিভাবে চলে এসেছে এই ব্যারনভাইলে। অ্যাম্বারের স্বামী ফ্র‍্যাঙ্ক মিচেল চাকরি করেন ম্যাক্সাস কোম্পানির ফুলফিলমেন্ট সেন্টারে। মাল ওঠানামা করানোই তার মূল কাজ। ফ্র‍্যাঙ্ক আর অ্যাম্বারের মেয়ের নাম জো, তার আসন্ন ছয় বছরের জন্মদিন উপলক্ষেই জেমিসন আর ডেকার এই জায়গাকেই বেছে নিয়েছে ছুটি কাটানোর জন্য।

তবে ছুটি কাটাতে এসে “নিশ্চিন্তে আর থাকা গেল না রে..”। অ্যাম্বারের বাড়ির উল্টোদিকের বাড়িতেই ঘটে যায় দুটো মার্ডার। অপরাধী পালাবার কিছু পরেই সেটা ডেকারের চোখে পড়ে এবং সেই প্রথম বাড়ির ভেতর ঢুকে আবিষ্কার করে মৃতদেহ দুটো। দুজনের পরনেই ছিল স্থানীয় পুলিশের পোশাক। জেমিসনের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও ডেকার নিজেকে জড়িয়ে নেয় এই খুনের কারণ অনুসন্ধান করার তদন্তে। স্থানীয় পুলিশের দুজন গোয়েন্দা গ্রিন আর ল্যাসিটারও যোগ দেয় তাতে। কিন্তু তদন্ত কিছুটা এগোবার পরেই আরও চারটি খুন হয় শহরের বিভিন্ন জায়গায়। সব জায়গাতেই দুজন ভিক্টিমকে মারা হয় একই জায়গায়। কিন্তু সেই দুজনের মধ্যে কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায় না।

ড্রাগের ব্যবসার জন্য ব্যারনভাইলের বেশ ভালোই নাম থাকলেও এই খুনের পিছনে আসল মোটিভ খুঁজে পেতে বেশ পরিশ্রমই করতে হয় ডেকার আর জেমিসনকে। তদন্তের পথে কাঁটা হয়ে আসে তাদের প্রাণনাশের চেষ্টাও। আর সপ্তম খুন এই তদন্তের ভিত্তি একেবারে নাড়িয়ে দেয়, কারণ এবার মারা যান ডেকার আর জেমিসনের পরিচিত একজন, আর সেটাও জো-এর জন্মদিনের দিন।

শুরু হয় থ্রিলার। মার্ডার মিস্ট্রি এগিয়ে যেতে থাকে নিজস্ব গতিতে। বইটা পড়া শুরু করার জন্য ওপরের ভূমিকাটাই যথেষ্ট। তবে পড়া শেষ করার পর আমার অনুভূতি কেমন সেটা জানাই এবার।

পুরোপুরি সময় নষ্ট!

বইয়ের কভারে আনপুটডাউনেবল লেখা থাকলেও অন্তত ৭০% সময়ে আমার মনে হয়েছে যে এবার রেখে দিতে পারলে বাঁচি। কিন্তু একবার কোনও বই শুরু করলে আর ছাড়ি না, আর লেখকের প্রথম কোনও বই পড়ছি, তাই শেষ না দেখে ছাড়ব না ভেবে পড়ে তো ফেললাম, কিন্তু মনে হল লেখকও আমার শেষ দেখে ছাড়বার তালেই ছিলেন। প্রচুর নাম শুনেছি লেখকের, বেশ জনপ্রিয় উনি। একাধিক উপন্যাস নিয়ে সিনেমাও হয়েছে। তবে আমার ধারনা সম্পূর্ণ উলটো। অবশ্য একটা মাত্র বই পড়ে বোঝাও সম্ভব নয়, হয়তো ওঁর সবচেয়ে বাজে উপন্যাসটাই প্রথমে বেছে নিয়েছিলাম। তবে লেখায় ধরে রাখার উপাদান বেশ কম, নেই বললেই চলে। থ্রিলার উপন্যাসে দৃশ্যের পরিবর্তন নেই, কেবল ডেকারের দিক থেকেই সমস্ত ঘটনা দেখতে থাকি আমরা। ভিলেনের দিক থেকে একবারও দেখানোর প্রয়োজন মনে করেননি। খুনের স্পটেই দেওয়ালে মাঝে মাঝেই বাইবেলের ক্লু দেওয়া থাকলেও শেষে তার কোনও যুক্তি মেলেনি, হয়তো লেখক ভুলেই মেরে দিয়েছিলেন সেইসব। বেশ অনেকগুলো চরিত্র ঢুকিয়ে খুনের একটা জাল সাজাতে চেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু প্লট বেশ ঘেঁটে গেল তাতে। জট ছাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকবার হাস্যকর ঘটনার আশ্রয় নিলেন। ক্লাইমেক্সে বাধ্য হলেন একটু গোলাগুলি চালাতে, কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না।

ফটোগ্রাফিক মেমরিওয়ালা একজন এফ বি আই এজেন্টকে নিয়ে আরও ফাটাফাটি থ্রিলার হয়তো লেখা যেত, কিন্তু এই বইটি পড়ে শুধু হতাশই হলাম না, ইচ্ছে করছে লেখককে একটা মেসেজও করতে এই লিখে যে, “পারবে… পারবে আমার হারিয়ে যাওয়া সময় ফিরিয়ে দিতে?”

বইটার দাম দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়নি। কারণ এই দেশে প্রচুর চ্যারিটি দোকান আছে, যেখানে ব্রিটিশরা বই পড়ার পর, বা না পড়েই এই দোকানগুলিতে বিনেপয়সায় দান করে যান। দোকানীরা সেগুলো খুব সামান্য দামে বিক্রি করে লাভের একটা বড় অংশ বিভিন্ন চ্যারিটিতে পাঠান। শুধু বই নয়, আরও নানান জিনিস পাওয়া যায় এই দোকানগুলিতে। এই বইটার আসল দাম ৭.৯৯ পাউন্ড, মানে আনুমানিক ৭৩০ টাকা হলেও আমি কিনেছি মাত্র ৫০ পেন্স, মানে ৪৫ টাকায়। বইয়ের কোয়ালিটি নতুনের থেকেও ভালো থাকে। এইরকম ৪৫ টাকার বইয়ের আমার একটা বিশাল কালেকশনও আছে। যতই হোক, বই কেনার এমন একটা সুবর্ণ সুযোগ থাকলে ছাড়ব কেন!

যাই হোক, আপনারা ভালো থাকবেন। এই বইটি ভুলেও পড়বেন না। আর আমি চললুম সামনের একটা চ্যারিটি শপে বিনামূল্যে বইটা দান করতে। বলডাচির জয় হোক!

?

✍ অরিজিৎ গাঙ্গুলি