অন্তিম যাত্রা

Anari Talkies, Friends, Humor, Movie, Reviews, আদতে আনাড়ি, গানের গল্প সিনেমার গল্প, দর্শকের চোখ, বাংলা

গাল ফুলিয়ে মুভি রিভিউ লিখে দিলেই তো আর হয় না, তার জন্যে যে পরিমাণ জ্ঞান আর পেটে বিদ্যে লাগে সেটার বিন্দুমাত্র আমার নেই। তাই মুভি রিভিউ লিখে সেটা জাস্টিফাই করানোর মতো গালে চাপ দাড়ি, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, চোখে চশমা, পরণে পাঞ্জাবি এগুলোর কোনটাই আমার নেই। তাই বেকার চাপ না নিয়ে আমি আপনাদের সাথে নিজের উপলব্ধি গুলো শেয়ার করি। অমুক তমুকের কেমন লেগেছে এটা জানার থেকে আমজনতার কেমন লেগেছে সেটা বেশি ভালো বলে বোধ করি আমি। কিছু বিধিসম্মত সতর্কীকরণ, এটাতে যতটা সম্ভব স্পয়লার কম দেওয়া যায় সেই চেষ্টাই করবো, আর আমার উপলব্ধিকেই মাইলফলক বানিয়ে নেবেন না; হতেও পারে আপনার হাল্ককে দেখে খুব প্রেম পায় আর আমার মাথা ধরে।

অ্যাভেঞ্জার এন্ডগেম। নামেও শুরুতেই মোটামুটি বড় স্পয়লার রয়ে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে খেলা শেষ, ভিলেনের হাতে মোটমাট সব কিছু, সোজা কথায়আন্ধেরা কায়েমহচ্ছে। কিন্তু যে দেশে রোহিত শেট্টির মতো ডিরেক্টার আছে, যে দেশে মার্ভেলের সব থেকে বড় ব্যবসা সেই দেশের লোকের কথা মাথায় রেখে মার্ভেল কখনো ভিলেন জিততে দিতে পারে? ব্যবসা চলবে? আমি তো আজ অবধি কোন সিনেমায় দেখলাম না হিরো ভিলেনের কাছে হেরে গেল (পোয়েটিক জাস্টিস পেলে আলাদা কথা)। তাই এখানে মার্কেটিং স্ট্যাটেজির কথা ভেবে এটা গেস করা যায় যে ভিলেন জিতছে না। শালা কিলভিস পারলো না, আর নাকি থ্যানোস…!!! সাথে এটাও ভাবা যায় মাসের শেষে যেভাবে টিকিটের দাপাদাপি শুরু হয়েছে এই নির্বাচনে না বিজেপির হারজিত নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়। মাসের এন্ডে একটা গেম চলছেই বটে, দেখবো কি দেখবোনা।

এখন অব্ধি দেখিয়েছে থ্যানোস এক টুস্কিতে সবাইকে ধরাশায়ী করে দিয়েছে, আধা লোক হাওয়া হয়ে গেছে ফুস করে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সবার ভালোবাসার কেউ কেউ হারিয়ে গেছে। মানে অ্যাভেঞ্জারের টিম অর্ধেক হয়ে গেছে, সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। এই রকম ঝোড় কাকের মতো দশা থেকে হাল ফেরাতে কর্পোরেশানের ন্যাচারাল ডিসাস্টার টিমে যোগ দেওয়ানো হলো ক্যাপ্টেন মার্ভেলকে। কোন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অফিসে একজন এমটেক করা লোক এলে ঠিক যেভাবে হম্বিতম্বি করে, কলার তুলে ঘোরে এখানেও একদম সেম ব্যাপার। মানে ওই আর কি, মানুষের জায়গা বদলে গেলেও কিছু কিছু স্বভাব তো একই থেকে যায় নাকি, ওরা অ্যাভেঞ্জার বলে কি মানুষ না?

সিনেমা ভালো লাগবে না মন্দ লাগবে সেটা যেমন ছবির ধারাপ্রবাহের ওপর নির্ভর করে, ঠিক সেরম ভাবেই নির্ভর করে সেই ছবির থেকে আপনার নিজের কি এক্সপেক্টেশান। বুঝিয়ে বলি, আপনি সিনেমা হলে স্টুডেন্ট অফ দ্যা ইয়ার দেখতে গেলেন এই আশা নিয়ে যে এখানে একটা ছাত্র প্রচুর পড়াশোনা করে ব্ল্যাক হোল নিয়ে একটা দারুন থিসিস দিয়ে, প্রচুর প্রাইজ ফ্রাইজ পেয়ে একদম একাকার করে দেবে; তারপর গিয়ে দেখলেন অমুক অভিনেতা আর অভিনেত্রী বুট ডুবে যাওয়া বরফের মধ্যে টি শার্ট আর চিকনের কুর্তি পরে নাচছে। আপনি আশাহত হবেনই। কিন্তু যদি উল্টোটা হয় তাহলে একটা শক লাগার মতো ব্যাপার হবে। সব শেষে কি দেখলাম না দেখলাম এসব গুলিয়ে গিয়ে নিজেকে ভালোটা বোঝাতে চেষ্টা করবেন, আপনই জিতবেন। তাই এখানেও ব্যাপারটা সেম। আমি ভেবেছিলাম আধা লোক শেষ, কাজ ও শেষ, তাই থ্যানোস এবার একটা সানগ্লাস আর লুঙ্গি পরে আরামসে সান বাথ নেবে। বাকিটা মজায় আনন্দে কাটবে, শেষে কিছু না কিছু করে হিরো জিতেই যাবে। মানে টোটাল এন্টারটেনমেন্ট যাকে বলে আর কি। সেই দিক থেকে ষোলআনা ফিরিয়ে দিয়েছে এই সিনেমা। কোনও অভিযোগের জায়গাই নেই, সাথে একদম বেড়ে খেলা কম্পিউটার গ্রাফিক্স। কেন যে কেউ গ্রাফিক্সে ডিজনির ধারে কাছে আসে না, সেটা হলে বসে তিন ঘন্টা ধরে বুঝতে পারবেন আবারো। এর সাথে যোগ দিয়েছে শচীনের নিখুঁত স্ট্রেট ড্রাইভের মতো কমিক টাইমিং। কখন কোথায় কোন কথা কিভাবে পাড়তে হবে সেটার একটা বাটারস্মুথ নিদর্শন পাওয়া যাবে এই সিনেমায়। এর জন্যে সংলাপ রচয়িতার একটা আলাদা করে হাততালি প্রাপ্য। যেহেতু এন্ড সেহেতু একটা যুদ্ধ না দেখালে হয়? ইন্টারভ্যালের পর মোবাইল বন্ধ করে, কাকে কিভাবে স্পয়লার দেবেন এগুলোর চিন্তা হলের বাইরে রেখে এসে হাঁ করে খালি যুদ্ধটাকে দেখবেন। লিখে দিচ্ছে পয়সা উসুল। অসামান্য গ্রাফিক্সএর কাজ আর সাথে সুন্দর শব্দ চয়ন আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক; এর জন্যে রুশো ব্রাদার্সকে আর তার টিমকে একটা কুর্নিশ জানাতেই হয়। এবার যদি প্লটের কথা বলেন তাহলে দেখতে হবে আপনার কি চাহিদা ছিল ছবিটার থেকে। যে মানুষ ভেবেছিল থ্যানোস লুঙ্গি পরে চিল করবে তার কাছে বেশ ভালো লাগারই কথা। যদি খুব বিশাল কিছু মাপের আশা করে থাকেন তাহলে কিছুটা আশাহত হওয়ার সম্ভবনা আছে। তবে বাকি এলিমেন্টগুলো সেটার ভরপাই করে দেবে। কিন্তু যেহেতু আমরা একটা এমন একটা দেশে থাকি যেখানে নিজের ছেলে শর্মাজির ছেলের থেকে কেন কম পেল সেটা জানতে চাওয়া হয় সেই জায়গা থেকে আমি ইনফিনিটি ওয়ারের থেকে এক নাম্বার হলেও কম দেবো এটাকে। এর বেশি আর মুখ খোলাতে যাবেন না, স্পয়লার বেরিয়ে যাবে হুহু করে।

সিনেমা দেখে বেরোনোর সময় আমার কেন জানি না একটা ব্যাপারে মনটা খচ খচ করছে। মানে সেটা সবার কাছে বলতেও কেমন কেমন করছে একটা। তবুও বলি, প্লিজ আমায় জাজমেন্ট করবেন না এটা দেখে; আমি না আসলে থ্যানোসের দলে আছি। আধা লোককে উড়িয়ে দিয়ে বেশ ভালো কাজই করেছিলেন ভদ্রলোক। না মানে একটু প্র্যাকটিকালি ভাবুন, বাইরে চল্লিশ ডিগ্রী চলছে, এরম সময় দুপুর ১২টা নাগাদ আপনি চার নম্বর থেকে বাস ধরে সেক্টর ফাইভ যাবেন। বাসে উঠে দেখলে বসার সিট আছে জানলার ধারে, আনন্দ হবে না? না খেতে পাওয়া, বেকারত্বের অনেক ঝামেলাও মিটে যেত; কিন্তু কি আর করা যাবে। থ্যানোস একটা জিনিসই পারতো না, কাকে কাকে ওড়াবে সেটা বাছতে পারতো না, সেটা ওর ওই নাকচ্যাপ্টা চ্যালাটা বা এদের আয়রনম্যান কে বুঝিয়ে বললেই ভালোকরে প্রোগ্রামিংটা করে দিতে পারতো। কিন্তু যা হয়নি আর ভেবে কি করবেন।এই ঐতিহাসিক ভুলটাই প্রতি লোকসভা আর বিধানসভা ইলেকশানের সময় আরো বেশি করে বুঝতে পারবেন দেখুন। এখনো হাড়েহাড়ে বুঝছেন আমি জানি।

শেষমেশ বলি, এই সিনেমাটা বাধ্যতামূলকভাবে থ্রিডিতে দেখবেন। ভুলেও এর নীচের কিছু না। ওপরের হলে কেমন হবে জানা নেই, তাই বলবো না, তবে নুন্যতম থ্রিডি, প্লিজ। হাতের কাছে পাইরেটেড কপি পাওয়া গেলেও হলে গিয়ে দেখে আসুন, নাহলে আসল মজা পাবেন কি করে। আর প্লিজ সাথে করে টিসু পেপার নিয়ে যাবেন, পারলে একটু বেশি করেই। চোখে সেরম জল আসে না বলে আমি তো নিয়ে গেলাম না, কিন্তু আমার আশে পাশে মানুষদের দেখে আমি তো থ। ইশশ সাথে আনলে এদেরকে দিয়ে একটু সাহায্য করতে পারতাম। মানুষের কষ্টের দিনে তাদের পাশে থেকে চোখের জল মোছাতে না পারার জন্যে নিজেকে কেমন যেন রাজনৈতিক নেতা বলে মনে হচ্ছে। এই পাপ  যে কিভাবে মুছি; স্ট্যান লি আমায় ক্ষমা করো।

~~~^^^~~~

সাবর্ণ্য চৌধুরি

#Anariminds