ঘরে ফেরার গান

Diwali, Freedom, Friends, Journey, Red, Story, বাংলা

শহর জুড়ে জারী হয়েছে রেড অ্যালার্ট। নিরাপত্তাবাহিনী অতন্দ্র প্রহরীর মতো সদা তৎপর। জায়গায় জায়গায় জ্বলছে আকস্মিক অসহিস্নুতার আগুন। আচ্ছন্নের মতো পুরো শহর ঘিরে রয়েছে নিরাপত্তাহীনতার চাদরে।

সামনে দিওয়ালী। আলোর উৎসবে মাতার জন্য তৈরী গোটা দেশ। যখন আলো আর আতসবাজির স্বপ্নময়তায় বিভোর শাজিদ, সোনী, তবসুমদের চোখ; ভারী ভারী বুটের শব্দ ধুলো উড়িয়ে নিস্তব্ধতাকে খানখান করে গেল।

“বাড়ী খালি করে দিতে হবে। চলে যাও গ্রাম ছেড়ে। যুদ্ধ শুরু হতে পারে!”

“আব্বু কাঁহা যায়ে হাম লোগ আপনে ঘর ছোড়কে”, মেয়ের করুণ মুখের দিকে তাকালো ইনায়ত, উত্তর দিতে পারল না কিছুই। সে শুনেছে সেনা জাওয়ান এক দল দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে খতম করেছে কিছু মুজাহিদ গোষ্ঠীকে। বদলা নিয়েছে ইন্ডিয়া। জাতীয়তাবোধের জ্বরে কাঁপছে দেশবাসী, ওদিকে আতঙ্কের দিন গোনা শুরু ওদের মতো প্রান্তিক মানুষগুলোর। ভাবনার জাল ছিঁড়ে আঁতিপাতি সামান বাঁধতে লাগল সে। পালাতে হবে দেশ-গাঁ, ভিটে-জমি এমনকি নিজের স্বাধীনস্বত্বা ছেড়ে। ঘরবাড়ী আর তার প্রিয় পোষ্য বুংলি কে ছেড়ে তবসুম চলে গেল ওর নানাভাই এর কাছে বাদরুন গ্রামে, যুদ্ধের আঁচ লাগেনি এখনও সেখানে। দিওয়ালীতে একটাও নতুন জামা হলো না। এইভাবে দিন চলে যায়! ফেরা হয়না। অপেক্ষার দিন গোনে সে।

বেশ কিছুদিন পর নিয়াকা গ্রামে ফিরল ইনায়ত একা। শেল- মর্টারের আঘাতে ভেঙে পরেছে ঘরবাড়ী। চেনা গলিপথ বড়ই অচেনা ঠেকল তার। জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে গবাদিপশুর মৃতদেহ, চাপ চাপ শুকিয়ে যাওয়া রক্ত। এদের মধ্যেই কোথাও পড়ে আছে তাদের বুংলি। গ্রামের বহু মানুষ গুরুতর জখম কিছুজন নিখোঁজ।তারা আদৌ বেঁচে আছে কিনা কে জানে । চোখে জল এল ইনায়তের। ইয়া আল্লাহ্ আর্তনাদে আকাশ বিদীর্ন হল।

মুখ ফেরাল ইনায়ত। এ যেন মৃত্যু থেকে জীবনের দিকে ফেরা। ফিরছে তার তবসুমের কাছে। মনে পড়ে যাচ্ছে, দীর্ঘ প্রসবযন্ত্রনা সহ্য করে মেয়ের জন্ম দিয়েছিল সকিনা, কিন্তু চোখের দেখাটুকু দেখে যেতে পারেনি। সেই থেকে মেয়ে কে একাই বুকে করে আগলেছে। সেদিনও হারেনি। আজও হারবেনা।

বাদরুন গ্রামে ঢোকার মুখে ছোট একটা মেলা লেগেছে। শেষবেলার ভাঙা হাটে টুকটুকে লাল রঙের ছোট্ট একটা ‘ফেইরান’ পছন্দ হল ইনায়তের।অনেক দড়াদড়ির পর শেষে কিনেই ফেলল।পা চালিয়ে ঘরে পৌছতে ছুটে এসে জাপটে ধরল মেয়ে। কোলে তুলে হাতে দিল নতুন জামাটা। তবসুমের একগাল ছড়িয়ে পড়া হাসিতে ভারাক্রান্ত আকাশের বুকটাও হালকা হয়ে ওঠে। কোথা থেকে সুর ভেসে আসে, “ভোলি চিরাইয়া, নন্ হি সি চিড়িয়া অঙ্গনা মে ফির আজা রে……...”

 

লেখিকা ~ কথাকলি মুখার্জী দত্ত

প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ qudrat.com.pk

প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds