খুকুমণি ও অনাত্মীয় (পার্ট ১)

Childhood, Friends, Humor, Protest, Satire, Series, Story, বাংলা

অফিস থেকে দুদিনের ছুটি নিয়েছি, একটু এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করবো। অনেকদিন আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো হয়না, সবার অভিযোগ। এই ছুটিতে তার খানিকটা পোষানোর ইচ্ছে ইচ্ছে আছে।

কোথায় প্রথমে যাই, ভাবতে ভাবতে তালতালার বাসে উঠেপরলাম। ভাবলাম দাদু জ্যেঠুৱা তো ঐদিকেই থাকে, তাই ওঁদেরকে একটু প্রণাম জানিয়ে আসি। বাস উঠে দেখি একটাও বসার সিট নেই। উল্টে গাদা লোক বাস উঠেইচলেছে। কিন্তু এরম তো হবার কথা নয়। আজকাল তো আর কেউ তালতালার দিকে যায় বলে শুনিনি। সে এককালে প্রচুর যেত, সবাই যেত। দরকারে যেত, অদরকারেও যেত। আর শুনতাম ওদিকে গেলে নাকি লোকজন প্রচুর তেল, ডালডা ইত্যাদি নিয়ে যেত। বছর ৭-৮ আগেও যেত শুনেছি। তারপর হঠাৎ নাকি সবাই যাওয়া বন্ধ করেদিল। আগে যারা তেল, ডালডা হাতে ঐদিকে যেতো তারা নাকি আজকাল পুজোদিতে অন্য দিকে যায়। নানা কালি পুজোনা। কালীঘাটে কালি মন্দিরকে টক্কর দেবার জায়গা এখন হয়েগেছে। তা হোগগে, আমার কি।

অনেক ঠেলাগুতোর পর নামলাম তো তালতলায়। বাপরে, নেমেই তো তাজ্জব। আগে তো এখানে সারাবছর কৃষ্ণচুড়া ফুটে থাকতো, আজতো দেখছি গাছে গাছে শুধু সবুজ পাতা, আর চারিদিকে ঘাস ভর্তি। জ্যেঠু জ্যেঠু বলে ডাক দিয়ে কলিং বেল টিপতে যাবো ওমনি দরজা খুলে গেল। ভেতরে খুব জোড় রবীন্দ্রসংগীত বাজছে। মনে হয় হানি সিংয়ের গলা। বেড়ে গায় ছেলেটা। সামনের বার গ্র্যামিটা বাঁধা।

তবে একটা খটকা লাগলো। অরোম বুর্জোয়া গান এবাড়িতে তো আগে শুনিনি। কে জানে। নোবেল চুরির দুঃখে শুনছে হয়তো। আমি একপা দুপা করে ঢুকলাম ভেতরে। বাইরে সেই এইয়া বড়ো হলঘরটা একি আছে। যাক কিছু অন্তত চেনা পেলাম। আর কয়েকপা এগোতেই আবার ধাক্কা। একটা ৯-১০ বছরের মেয়ে বসে আছে। মেয়েটাকে তো চিনি। আহা, চিনি মানে দেখেছি পেপারে, টিভিতে। নানা, রিয়ালিটি শো তে নয়। এ মেয়ে খুব গুণবতী। ছবি আঁকে, গান গায়, কবিতা লেখে, আরো কিসব করে যেন। মানে এমন কিছু ভালো জিনিষ নেই যে সে তা করে না।

কিন্তু মুশকিল হচ্ছে জ্যেঠুদের সঙ্গে এই মেয়েটার বাড়ির লোকেদের তো বেজায় ঝামেলা শুনেছিলাম। এই মারে তো সেই মারে। ন’জ্যেঠুতো একবার এই মেয়েটারই মাথা ফাটিয়েছিলো। সে কি ঝামেলা – বাপরে বাপ।

তা এগিয়ে গেলাম মেয়েটার দিকে। কাছে গিয়ে মালুম হলো সে একটা সাদা ফ্রক পরে বসে আছে। মাথায় নীল ফিতে দিয়ে চুল বাঁধা। চারিদিকে মাটি ছড়ানো। ঘরের মধ্যে এতো মাটি কোথা থেকে এলরে বাবা। আর সেই মাটির ওপর দেখি একগাদা পুতুল। কয়েকটা পুতুল অবশ্য মেয়েটার কোলের ওপরেও রাখা।

আরো কাছে গেলাম।

এই মেয়ে, কি করছো এখানে?

ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে সে উল্টে জিজ্ঞাসা করল – “তুমি কি ম্যাও? নাকি কেন্দ্রীয় জলদস্যু?

 

 

খুকুমণি ও অনাত্মীয় (পার্ট ২)

লেখক পরিচিতি ~ শান্তনু দাস

প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ unboxedwriters.com

প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds

3 comments

Comments are closed.