গন্ধবিচার

Anirban & Arijit, Bathroom, Humor, Short Story, আদতে আনাড়ি, বাংলা

নাহ্, এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হচ্ছে। এইভাবে মেইল করে দিল সবাইকে! পারসোনালি এসে একবার বলতে পারতো। মুখ দেখানোর আর জায়গা রইল না।

বিমলের আজ আর কাজে মন বসবে না। মানুষের জন্মগত অধিকারে নিজের বউ হস্তক্ষেপ করলেও না হয় মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু একটা অফিস কলিগ এইভাবে নাম খারাপ করবে। এমন হাবভাব, যেন নিজের পেটে কোনদিন বায়ু জমে না, বা তা নির্গমও হয় না।

বিমলের হজমের সমস্যা আছে সেটা ও মানে। অম্লজিন চূর্ণ রোজ রাতে ডিনারের পর নিয়ম করে পৌষ্টিকতন্ত্রে ইনভেস্ট করে, কিন্তু বাগরা দেয় শালা ওই লঙ্কাগুঁড়ো। কতবার রান্নার মাসি কে বারণ করেছে, কিন্তু কে শোনে কার কথা, ওনাকে নাকি কালার আনতে হবে খাবারে, নয়তো বিক্রি হবে না।

গতকালের মিটিং-এ মৌমিতা, অনিন্দিতা, অভিষেক, মুকুল সকলেই তো বসেছিল, কিন্তু পালের গোদা হয়ে মেইল টা করে বসল অরিজিত। কষ্ট বিমলেরও হচ্ছিল, একে ওই ছোট মিটিং রুম, তার ওপর এ সি টাও কম করা ছিল, কিন্তু বায়ুদূষণের নামে সোজা এইচ আর কে নালিশ
আর সেটাও বিমল কেই বলির বাখরা বানিয়ে।

তাই আজ সবাই ওকে দেখলেই নাকে আঙুল দিচ্ছিল, এতক্ষণে ব্যাপার টা ক্লিয়ার বিমলের কাছে। পবনমুক্তাসন করে প্রমাণ দিতে পারে যে অফিসে নিয়মিত নির্গত বায়ুর মালিক একা বিমল নয়।

শোয়ার আগে দু চামচ জোয়ানের আরোক গলায় ঢেলে শুতে গেল বিমল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই খুব জমবে রঙ যখন মিলে বসবে তিন ইয়ার – অ্যালোভেরা, আমলা আর ত্রিফলা। কিন্তু ঘুম আর আসতে চায় না। পরশু এইচ আর এর কাছে যাওয়ার আগে কিছু একটা তো ভাবতেই হবে। লজ্জায় মাথা অলরেডি কাটা গেছে, ওয়াটসঅ্যাপে পর্যন্ত ভাইরাল হয়ে গেছে মেইল টার স্ক্রিনশট, “রিকারসিভ ফার্টিঙ”। নিজেই দুটো বন্ধুর থেকে পেয়েছে, তাদের মিথ্যে বলতে হয়েছে যে হি ইস নট দ্য “ওনলি বিমল”।

পাচনতন্ত্রের সহজ নিয়ম, বায়ু কে বেরোতেই হবে, তা সেটা কখনো সকলের অজান্তে থুচ্চুক স্টাইলে, বা কখনো “রাজা পাধার রাহে হ্যায়” ভঙ্গি তে ডঙ্কা বাজিয়ে। গন্ধ ডিপেন্ড করে ইনগ্রেডিয়েন্টের ওপর, যত গুড় ঢালবে, তত মিষ্টি। পথ চলতে হরদম পটকা তো ফাটতেই থাকে, তবে নীরবে নিভৃতে ব্জ্রনিনাদের সহিত ৩০ সেকেন্ড ব্যাপি অবিরত পবনমুক্তির হর্ষোল্লাস তুলনাহীন।

বিমলের মাথায় আসে একটা বেড়ে প্ল্যান – মিশন “এক হাওয়া কা ঝোঁকা”।

||

অফিসে ঢোকার সাথে সাথেই আবার সেই দৃশ্য, কোনরকমে মাথা নিচু করে নিজের কিউবিকলে গিয়ে বসে পড়ল বিমল। হিহিহুহু হাসির একটা রোল উঠল পাশের ডেস্কে, কে একটা “উঁহ্” বলে আওয়াজ করল।

মেলবক্স খুলে দৃঢ় হাতে টাইপ করতে শুরু করল বিমল। এইচ আর কে সিসি তে রেখে টু তে রাখল মৌমিতা, অনিন্দিতা, অভিষেক, মুকুল আর মূল অভিযুক্ত অরিজিত কে। সব দেখে নিয়ে ক্লিক করল “সেন্ড”।

||

বড়জোর ১০ মিনিট হয়েছে মেইল টা ছাড়ার পর। হঠাৎ সবাই নিজের ডেস্কের দিকে ছুটতে লাগল, ভিড় বেশি ঐ ৫ জনের ডেস্কে। মুখের হাসিগুলো সবার খানিকক্ষণের জন্য মিলিয়ে যেতে দেখে মুচকি হাসল বিমল। নিজেই আবার মেইল টা খুলে পড়তে শুরু করল।


প্রিয় বন্ধুগণ,
আমাকে গন্ধের কারিগর রূপে ভূষিত করিবার জন্য আমি যারপরনাই কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে। আশা করি সকলের মনোরঞ্জন করিতে সক্ষম হইয়াছি, যাহার ফলস্বরূপ আপনারা আমাকে প্রকাশ্যে মনোরঞ্জনের বিষয়বস্তু বানাইয়া দিয়াছেন। যাহা হউক, যে সুবাস আপনাদের এতদিন আনন্দ দিয়াছে, তাহা আমিও যে উপভোগ করিয়াছি নিত্য। কথায় আছে নিজ সুবাসের আহরণ দুর্লভ। অতএব, আমার এই সম্মাণ একার প্রাপ্য নয়।

আজ সন্ধ্যা ৫ ঘটিকায় আমি আমন্ত্রণ জানাইতেছি আপনাদের সকলকে এবং এইচ আর ম্যাডাম কে আমাদের পার্শ্ববর্তী মিটিং রুমে। অবশ্যই মধ্যাহ্নভোজন মন দিয়া করিবেন এবং সন্ধ্যায় প্রমাণ করিয়া দিবেন যে সুবাসটি ঠিক কাহার ছিল, আমার?

“রিকার্সিভ ফার্টিং” এর মালিক কে চয়ন করতে হয়েই যাক না এক রাউন্ড “গন্ধবিচার”!

ইতি
শ্রী বিমল পোদ্দার

মেইল টা বন্ধ করে মাথার ওপরে দুহাত তুলে স্বস্তির আড়মোড়া ভাঙল বিমল, কিন্তু চমকে উঠল একটা শব্দে। আজ ফুলকপি তেও মাসি লঙ্কাগুঁড়ো মেরেছিল নির্ঘাত!

 

লেখক ~ অরিজিৎ গাঙ্গুলি

প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ cdn.someecards.com

প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds