তোমাদের পুজো

Durgapuja, Friends, বাংলা

আর মোটে কয়েকটা দিন বাকি। আবার সেই পুরোনো তাপ্পি দেয়া ধরা চূড়ো গায়ে সং সেজে দাঁড়াতে হবে। চার পাঁচটা দিন যে কি খাটুনি যায় সেটা তো আর বোঝেনা কেউ। আর এতো কিছুর পরেও কজনেই বা আমার দিকে ফিরে তাকায়!

কিন্তু আমার কি দোষ বলুন তো? আমি প্রবল পরাক্রমী ছিলাম সেটা আমার দোষ! নাকি আমি চেয়েছিলাম আমার জাতিটা একটু সম্মান পাক, একটু শক্তিশালী হয়ে উঠুক – সেটা? অতো কঠোর তপস্যা করেও তো আমি অমরত্বের অধিকারী হতে পারলামনা। সেটা কি আমার জন্মকুলের জন্য নয়!


সেই সাগরমন্থনের সময় আমাদের বোকা বানিয়ে যখন বিষধর সাপের মুখেরদিকটা ধরতে দেওয়া হলো, তখন কোন অনৈতিক কাজ করা হয়নি বুঝি! তারপর অমৃতের একফোঁটাও তো পেলনা আমার পূর্বপুরুষদের কেউ। কেনো বলুন তো? আমরা জন্মসূত্রে বিশুদ্ধ রক্তজাত নোই বলে!

বেদের প্রাচীণ অংশেতো অসুর আর দেবতা একই ছিল বলে শুনেছিলাম। তারপর কোনো এক সময় দেবতাদের উচ্চ আসন দেবার জন্য কাউকে খর্ব করার দরকার ছিল বলেই কি আমাদের নিচুতে নামানোর প্রয়োজন হয়েছিল?

আমরা কোনদিন কাউকে বোকা বানিয়ে কিছু নিইনি। বা চাইনি কিছু ভিক্ষা করেও। সবসময় আমরা নিতে চেয়েছি আমাদের সামর্থ্য দিয়েই। তাও আমাদের সাথে এতো বঞ্চনা কেন?

গায়ের রং কালো বলে, আর জাতির শুরুতে মায়ের জন্ম নিচু ঘরে হয়েছিল বলেই আমাদেরকে এতো ঘৃণা!

বঙ্গদেশ তো আমাদেরই দেশ ছিল কোন আদি কাল থেকে। আমাদের বাপ ঠাকুর্দাদের দেশ। ছোট থেকে আমরা বেড়ে উঠেছি সেই দেশেই। আর সেই দেশ থেকেই আমাদের বিতাড়িত করা হলো। শুধু আমাদের তাড়ানোই হলোনা, বরং ইতিহাস, ধর্মগ্রন্থগুলো এমন ভাবে লেখা হলো যেনো আমরা এই বঙ্গে অপাংক্তে। খুঁজে দেখলে আজও তার সাক্ষী পেতে পারেন আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থে।

আর আমাদের তাড়িয়েও যখন মনের জ্বালা মিটলোনা, তখন শুরু হলো তোমাদের তন্ত্র মন্ত্রের আরাধনা, হোম যজ্ঞ। দলে দলে দেবতারা মিলে শুরু করলো আমাদের মুণ্ডচ্ছেদ, অঙ্গচ্ছেদ, আর দাস বানিয়ে রাখার চেষ্টা। যজ্ঞের নামে আমাদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা শুরু হলো। সেই যজ্ঞ পণ্ড না করে কি আমাদের কোনো উপায় ছিল? তাও যখন আমাদের শেষ করা গেলোনা, আমাদের রক্তবীজের ঝাড় বলে হীন চোখে দেখা শুরু হলো। আমরা প্রতিবাদ করেছি, প্রতিরোধ গড়েছি চিরকাল।

আমায় মারবার জন্যও একজন মাকে ডেকে আনতে হলো। মায়ের জাত বলে আমি তো হার স্বীকার করে নিলাম, ওরা অবশ্য জানতো আমার দুর্বলতা। আর তার সুযোগে শুধু আমাকে হারালোই না, আমার নামে মিথ্যে অপবাদ রটালো আমি নাকি দূর্গা মায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি।

হ্যাঁ, আমি অসুর। মহিষাসুর। মায়ের জাতিকে আমরা কোনোদিন ছোট করিনি। আমাদের সভায় অপ্সরা নাম দিয়ে মহিলাদের অপমান করা হয়নি।

 

 

 

 

লেখক ~  শান্তনু দাস

প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ timemattersconcierge.com

প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds