এই গল্পটা পড়বেন না

Anirban & Arijit, Facts, History, Humor, Technology, আদতে আনাড়ি, বাংলা

না না, ভুলেও পড়বেন না, প্লিজ কথা শুনুন। বারণ করছি, হাতজোড় করছি। পড়া শুরু করে ফেলেছেন বুঝতে পারছি, কিন্তু নিষেধ শুনছেন না, পরে আমাকে দোষ দেবেন না। এখনও সময় আছে, স্ক্রোল করে বেরিয়ে যান।

এই যে এতোবার বারণ করার পরেও গল্প টা পড়তে ঢুকলেন, ভাবলেন কিছু লুকোতে চাইছে এই হালফিলের ফেবু লেখক, যাই দেখে আসি গিয়ে, না পড়লে যদি ইন্টু পিন্টু কিছু মিস হয়ে যায়! তাহলে বলেই দি আমার আজকের টপিক এই নিয়েই। নেগেটিভ পাবলিসিটি বা অপপ্রচার। 🙂

শিয়ালদা বনগাঁ লাইনে বিকেলের ফিরতি ট্রেন। ভেতরে দমবন্ধ পরিবেশ, পেটে ছুঁচো ডন মারছে আর পেছনের পাবলিক শিরদাঁড়া বরাবর গুঁতো মারছে। ভিড়ের ঘনত্ব যাই থাকুক না কেন, হকারদের ড্রিবল স্কিল নিয়ে কোনোদিন সন্দেহ প্রকাশ করবেন না, মাছি না গললেও মুড়ির টিন শশাকুচি চানাচুরের মগ সমেত আস্ত হকার ঠিক এমুড়োওমুড়ো করে ফেলবে গোটা ২-৩ বার। তা এই ঝুকুর ঝুকুর দুলুনির মধ্যেই সেইরকম দুতিনজন চা, মুড়ি ওয়ালা অলরেডি সান্টিং হয়ে গেছে এদিক ওদিক। হঠাৎ ভিড়ের মাঝখান থেকে ভেসে এল কর্কশ চিৎকার।

“পচা বাদাম। পচাআআ বাদাআআম। একদম থার্ড কেলাস বাদাম, পচে যাওয়ার গ্যারান্টি, খাবেন আর টের পাবেন। ৫ টাকা ১০ টাকার প্যাকেট। বিখ্যাত সুনীলের পচা বাদাআআআম।”

আপনি তখন মন দিয়ে জানলার বাইরে দেওয়াল লিখনই পড়ুন, বা ঢুলু ঢুলু চোখে বাঁদিকের কাঁধে ঢলে পড়ার আগে নিজেকে ব্যালেন্সই করুন, বা মন দিয়ে চা খেতে খেতে খবরের কাগজেই চোখ বোলান, আপনার চমক ভাঙতে বাধ্য মশাই, বাধ্য! এ আবার কি, কেউ পচা বাদাম বেচতে পারে! বলে কি লোকটা, সামনে আসুক তো, দেখি কি নিয়ে ঘুরছে। সামনে এলে তেল আর বাদামের ভুরভুর গন্ধে মনটা ভরে উঠবে আপনার, আর জিজ্ঞেস করে ফেলবেন।

– বাদাম তো একদম টাটকা দেখছি হে, দাও এক ঠোঙা দিকিনি, কিন্তু পচা পচা করছিলে ক্যান?

– বেওসার টেকটিক বাবু। এই যে আপনি কান খাড়া করে শুনলেন, আমায় ডাকলেন, আমার বাদাম দেখলেন, এবার খেতেও চলেছেন, এতেই অন্যদের থেকে একটু বেশি নজরে পড়া গেল আর কি। নয়তো এই লাইনে আর কজন চেনে আমাদের। এই ন্যান আপনার বাদাম।

মনে ধরল ছোকরার কথাগুলো। সত্যিই তো, ঝালমুড়ি, কটকটি, চপ, চা ছেড়ে আমি তো সাধারণ চীনাবাদামই কিনলাম, শুধু ওর বেচার গুণে। সেদিনই মাথার পোকা গুলো নড়ে উঠল, এই ব্যাপারটা নিয়ে তো একটু নাড়াচাড়া করা যেতে পারে!

কথায় আছে “অপপ্রচার বা কুৎসা বলে কিছু হয়ই না, যেকোন প্রচারই নাকি লাভজনক।” বলে যা বলুক লোকে মন্দ, জানবেন লোকের মনে আপনি তো আছেন। কেউ তো আপনাকে নিয়ে ভাবছে, আলোচনা করছে। কারোর মনের মণিকোঠায় না থাকুন, তার শয়নে স্বপনে জাগরণে তো আপনি তা ধেই ধেই করে নেচে চলেছেন।

আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদী কেই ধরুন। না না, দলবাজি তে আমি নেই, শুনুন না। যখন তিনি সবে মনোনীত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য, ঠিক তখনই ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের মণিশঙ্কর আইয়ার কেলো করে বসলেন। উনি বললেন “আমি লিখে দিচ্ছি একবিংশ শতাব্দী তে মোদী প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, তবে উনি চা বেচতে চাইলে বলুন, আমরা টেবিল পেতে দেব।” ব্যাস, দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল খবর যে মোদী ছোটবেলায় বাবা কে চা বিক্রিতে সাহায্য করত আর পরে ভাই এর সাথে একটা চায়ের স্টলও দিয়েছিল। একটা অপপ্রচার কে কিভাবে নিজের কাজে লাগানো যায়, আমরা স্বচক্ষে দেখলাম। একজন চা ওয়ালাও যে প্রধানমন্ত্রী হতে পারে, সেই নিয়ে শুরু হল “চায়ে পে চর্চা”। বাকিটা ইতিহাস। সেই ইতিহাসের ভুক্তভোগী দের আলোচনায় আর গেলাম না এখন।

এদিকে স্ট্যানফোর্ড বিজনেস স্কুলের ইকোনমিক্সের প্রফেসর অ্যালান সোরেনসেন-এর একটা কথা বেশ মনে ধরল আমার। “বেশিরভাগ কোম্পানিই ভেবে কুলকিনারা পায় না যে তারা পাবলিককে তাদের প্রোডাক্ট টা কত ভালো সেটা বোঝাবে, নাকি পাবলিককে শুধু জানাবে যে তাদের একটা প্রোডাক্ট আছে। যেখানে কম্পিটিশান বিশাল, সেখানে দ্বিতীয় পন্থাই শ্রেয়, তা সে সুপ্রচার হোক বা কুপ্রচার, পাবলিককে অস্তিত্ব জানানোই আসল।”

আমাদের ম্যাডোনা কেই ধরুন। প্রচারে থাকার জন্য হেন কাজ নেই যে তিনি করেননি। ২০০৩ সালে এমটিভি অ্যাওয়ার্ডসে পারফর্ম করার সময় হলভর্তি দর্শকের সামনে স্টেজের মধ্যেই ব্রিটনি স্পিয়ার্সকে চুমু খেয়ে বসলেন, তাতেই ক্ষান্ত হলেন না, মুখ ঘুরিয়ে অন্যপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রিশ্চিনা অ্যাগুইলেরা কেও ছাড়লেন না। আর যায় কোথা, জ্বালাময়ী এই খবরটা মিডিয়া তে জেগে রইল প্রায় এক বছর, আর তারিয়ে তারিয়ে ফায়দা লুটলেন কুইন অফ পপ। পরে ব্রিটনির ম্যানেজারের থেকে জানা গেছিল যে এই পুরো প্ল্যান টাই ছিল ম্যাডোনার, এবং তিনি রীতিমতো রিহার্সাল করে এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ভাবুন খালি!

এই যে “পদ্মাবত” নিয়ে করনি সেনার এতো হইচই, মার মার কাট কাট। বানসালি তো মুচকি মুচকি হাসছেন। কিন্তু এবার মানে টা বুঝছেন তো কেন ঐ সেনাবাহিনী এইসব করছে? ওরা কিন্তু নিজেরাও জানে মুভি তে বিতর্কের কিসসু নেই। কিন্তু পাবলিসিটি বস। আজ থেকে এক দু বছর বাদে লোকজন ইস্যু টা ভুলে যাবে, শুধু মনে থেকে যাবে এই করনি সেনার নাম টা, তাহলে আখের কে গোছালো? এই ব্যাপারটার একটা সায়েন্টিফিক নাম আছে, সেটা হল গিয়ে “স্লিপার এফেক্ট” (Sleeper Effect)।

এটা এমন এক মনস্তাত্ত্বিক বিষয় যেখানে মানুষের মনে কোনও ঘটনা বা বিবরণ বা দৃশ্যের মূল বিষয়বস্তু টাই শুধু মনে গাঁথা রয়ে যায়, কিন্তু তার আশেপাশের প্রাসঙ্গিকতা সময়ের সাথে লোপ পায় স্মৃতি থেকে। ধরুন একটা অজানা আনকোরা লেখকের একটা ততোধিক বাজে বই প্রকাশিত হল। বইয়ের নাম “আদতে আনাড়ি”। সেই বইয়ের কোনও এক পাতার ছবি ফেসবুকে চলে এল আর লেখা রইল যে লেখক ধর্ম ও যৌনতা কে এক করে দিয়েছেন। ব্যস, ভাইরাল হয়ে গেল রাতারাতি খবরখানা। গল্পের গরু গাছে উঠে গিয়ে মগডালে হেলান দিয়ে চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়ল। তিন চারমাস বাদে আপনি কলেজস্ট্রীটে ঘুরতে গিয়ে একটা স্টলে দেখলেন “আদতে আনাড়ি” বই খানা শেল্ফে রাখা আছে। আপনার মনে হল এই নামটা যেন কোথায় শুনেছি, খুব চেনা চেনা লাগছে, ফেসবুকেই অনেকবার মলাটের ছবি দেখেছি মনে হচ্ছে, খুব পপুলার মনে হয়, কিনে দেখাই যাক না ভেতরে মালমশলা কি আছে। কেল্লা ফতে! “আদতে আনাড়ি” এইভাবে বেস্টসেলার হয়ে গেল। একেই বলে স্লিপার এফেক্ট। আর এদিকে আমি কিছু ফুটেজ খেয়ে নিলাম শালা মওকা পেয়ে!

এইরকম বইয়ের রিভিউ নিয়েই নিউইয়র্ক টাইমস এর একটা রিসার্চে দেখা গেল যে ভালো রিভিউ যেকোন বইয়ের বিক্রি ৩২% থেকে ৫২% অবধি বাড়াতে পারে। কিন্তু মোটামুটি দেখা যায় চার সপ্তাহ সময় লাগে কোনও বইয়ের রিভিউ জমা হতে। তাই রিসার্চাররা বেশ কিছু বইয়ের তথ্য যোগাড় করে চমকে গেলেন। চার সপ্তাহে যে সব নতুন লেখকের বইয়ের বেশ গালিগালাজ পূর্ণ রিভিউ এলো, তার বিক্রি বেড়ে গেল ৪৫%। আর বিখ্যাত লেখকদের বিক্রি নেমে গেল ১৫%, শুধু খিস্তি খেয়ে।

এইসব দেখে আমাদের বেঁড়েপাকা চেতন ভগত “ওয়ান ইন্ডিয়ান গার্ল” নামিয়ে ফেললেন। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গি তে টুইট করলেন বইটার একখানা ছবি দিয়ে, “দেখুন আমার বই টা রাখা আছে গ্রীক দ্বীপ মাইকোনোস-এর একটা বারান্দার রেলিঙে, আমার এক ফ্যানের পাঠানো ছবি। আপনারাও এইরকম সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ডে আমার বই টা রেখে ছবি শেয়ার করুন।” ব্যস, পাবলিকও হুজুগের অপেক্ষায়, পুরো পাগলা-খাবি-কি-ঝাঁঝেই-মরে-যাবি স্টাইলে ছবি আসতে থাকল, কোথাও বই টা উনুনের ওপর, কোথাও কাগজকুড়ানির হাতে, সানি লিওনের পেটের ওপর রাখা, নদীর জলে ভাসছে। মানে ফুল হ্যাটা কেস আর কি। কিন্তু যত বিতর্ক, যত ঘেন্না, সব আখেরে কিন্তু বাড়িয়ে দিল বইটার বিক্রি, রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেল “ওয়ান ইন্ডিয়ান গার্ল”।

বই নিয়ে অনেকক্ষণ কপচাচ্ছি, এবার একটু সিনেমায় আসা যাক, আমার ফেভারিট জঁরা। অ্যারন এখার্ট ও কেটি হোমস অভিনীত “থ্যাঙ্ক ইউ ফর স্মোকিং” রিলিজ করল ২০০৫ সালে। সেক্সপিয়ার বলে গেছেন “নামে কি বা আসে যায়”। কিন্তু নামই যে লোক টানে তা আবার প্রমাণিত হল। সিগারেট কোম্পানির প্রচলিত ওয়ার্নিং এর বিপরীতে যাওয়া এই নাম দেখেই লোকজন থিয়েটার ভরিয়ে ফেললেন, আর ছবির বিষয়বস্তুও অনেকটা সেই নিয়েই। বিশ্বের বিখ্যাত পাঁচ টোব্যাকো কোম্পানিগোষ্ঠীর প্রধান মুখপাত্র নিক নেলর কিভাবে ধূমপানের স্বপক্ষে প্রচারের মাঝে নিজের ছেলের কাছে নিজেকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরলেন, তা দেখতে হলে এই সিনেমা টা মিস করবেন না।

ঠিক এর পরের বছর অর্থাৎ ২০০৬ সালে এল আর একটা কুখ্যাত মুভি। সাচা ব্যারন কোহেনের “বোরাট”। না দেখে থাকলে বাচ্চাদের আলাদা ঘরে পাঠিয়ে একা একা দেখতে বসুন। সিনেমাটায় কাজাখিস্তান কে নিয়ে এক অন্য লেভেলের প্যারডি বা পাতি বাংলায় খিল্লি করা হয়েছে। বহু বিতর্কের মাঝে যখন এই মুভি রিলিজ হল, তখন বিখ্যাত টুরিজম সাইট “হোটেল ডট কম” এক আশ্চর্য রিপোর্ট প্রকাশ করল যে “বোরাট” বেরোবার পর থেকেই কাজাখিস্তান নিয়ে মানুষের আগ্রহ ৩০০% বেড়ে গেছে। একটা পিছিয়ে থাকা দেশ রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেল। তাহলে বুঝতে পারছেন তো নেগেটিভ পাবলিসিটি কি ভয়ানক জিনিস!

এবার আবার চলুন অন্যদিকে, ভুরিভুরি উদাহরণ আছে যে। ১৯৮৫ সাল, চারিদিকে কোকাকোলার রমরমা বাজার। ভারতেও ঢুকে পড়েছে এই নব্য পানীয়। এর মধ্যেই কোম্পানির মালিকরা ঠিক করলেন যে কোকের একটা মিষ্টি সংস্করণ বাজারে ছাড়া উচিৎ। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল “নিউ কোক”। ঠিক তিন মাসের মধ্যেই মালিকরা বুঝতে পারলেন যে তারা ছড়িয়ে ছত্রাকার করে ফেলেছেন। পানীয় ব্যবসার ইতিহাসে সবচেয়ে ভুল পদক্ষেপ তারা নিয়ে ফেলেছেন। দিনে ১০০০ ফোনকল আসতে শুরু করল কাস্টমার কেয়ারে, বিশ্বের সমস্ত প্রান্ত থেকে ৪০,০০০ অভিযোগপত্র এসে জমা হল সদর দপ্তরে। মালিকদের মাথায় হাত, জরুরি সভা তলব করা হল হেডকোয়ার্টারে। সারাদিন ধরে নানান উপায় আলোচনা করার পর স্থির হল আবার আগের স্বাদে কোকাকোলা ছাড়া হবে, কিন্তু তার নতুন গালভরা নাম দেওয়া হবে “কোকাকোলা ক্লাসিক”। এই ব্র‍্যান্ড বাজারে আসতেই পাবলিকের মধ্যে আলোড়ন তৈরি হল, যেন কুম্ভের মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাই ফিরে পেল সবাই। আর বিক্রির হার? সে আর হিসাব না করাই ভালো, তার মাত্রা আগের থেকেও বহু বহু গুণ ছাড়িয়ে গেল, ভাবা যায়!

আর একদিকে ফাস্ট ফুড জায়েন্ট “ট্যাকো বেল” বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করল যে একমাত্র ওদের কাছেই খাঁটি বিফ পাওয়া যায়। হেব্বি সেল হতে লাগল, ইন্ডিয়াতে নয়, বালাই ষাট, বলেন কি! এসব সেই দেশের কথা, যারা গরু কে দেবতা ভাবেন না। ২০১১ সালে এই ট্যাকো বেল একখানা মোক্ষম আইনি কেস খেয়ে গেল যে ওদের প্রোডাক্টে শুধু ৩৫% খাঁটি বিফ আছে। লোকজন গেল খেপে, দোকানে ভিড় গেল কমে, সবাই ভাবলো ওদের এতদিন ঠকানো হচ্ছিল। তবে দমলো না কর্তৃপক্ষ। ফেসবুক আর ইউটিউব জুড়ে প্রচার শুরু করল তারা আর বলতে লাগল যে তাদের খাবারে ৮৮% খাঁটি বিফ, আর বাকি ১২% সিক্রেট রেসিপি। এই সিক্রেট রেসিপির প্রতিটি উপকরণের লিস্ট ছড়িয়ে দেওয়া হল মার্কেটে, ফলে আর কিছুই সিক্রেট রইল না পাবলিকের কাছে। বিশ্বাসের অপর নাম হয়ে উঠল “ট্যাকো বেল”। শুধু স্বমহিমায় নয়, আরও দাপিয়ে ফিরে এল তারা বাজারে।

ঠিক এমনই গল্প তো ভারতে ম্যাগির সাথেও হল। আজিনা মোটোর পালা চুকিয়ে আজ ম্যাগির বিক্রি ভারতের মাটিতে আগের থেকেও অনেক অনেক বেশি। তাই অপপ্রচার কিভাবে মানুষের মন বদলে দিতে পারে, তার ছবি স্পষ্ট ইতিহাসের পাতায়। এখন বিশ্বাস হচ্ছে তো এই গল্প পড়তে কেন বারণ করছিলাম। দো কড়ি কা এই ফেবু লেখক অনেক গবেষণা করে সেগুলো দেখাতে চাইছিল আপনাদের, ঘোর পাপ, এ ঘোর পাপ, এর ক্ষমা নেই। তবে দাঁড়ান, শাস্তি দেওয়ার আগে শেষ ঘটনা টা শুনে নিন।

এখন তো মাঝেমাঝেই শুনে থাকবেন যে প্রোডাক্টে কিছু গোলমাল এলেই কোম্পানি সেই প্রোডাক্ট রিকল করে বা ফিরিয়ে নেয় সমস্ত রিটেলার বা কাস্টমারদের থেকে, যেমন ম্যাগি, স্যামসাং ফোন, গাড়ি এইসব উদাহরণ আমরা খেয়াল করেছি। তবে প্রথমবার কোনও কোম্পানি সারা বিশ্বজুড়ে এই রিকল করেছিল ১৯৮২ সালে। কারা জানেন? বিখ্যাত ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা “জনসন অ্যান্ড জনসন”! মোট ৩১ মিলিয়ন (৩ কোটি ১০ লাখ) ওষুধের শিশি ওরা ফিরিয়ে নিয়েছিল সব জায়গা থেকে আর তার পরিবর্তে সবাইকে বিনামূল্যে দিয়েছিল একই ওষুধ ট্যাবলেটের আকারে। ঘটনার সূত্রপাত ২৯শে সেপ্টেম্বর ১৯৮২, খবর পাওয়া গেল চিকাগো তে ৭ জন মারা গেছে জনসন অ্যান্ড জনসনের বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় পেনকিলার টাইলিনল খেয়ে। এই টাইলিনল ছিল ওদের ব্যবসার মূল স্তম্ভ। রাতারাতি মুখ থুবড়ে পড়ল সংস্থা। তবে হাত গুটিয়ে বসে না থেকে সব ওষুধ ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তদন্ত শুরু করল জনসন অ্যান্ড জনসন। দু মাসের মধ্যেই ধরা পড়ল চাঞ্চল্যকর এক তথ্য। চিকাগোর বেশ কয়েকটি দোকানে বিক্রির আগেই ষড়যন্ত্র করে টাইলিনলের শিশিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল সায়ানাইড, যার ফলেই হয়েছিল কিছু নিরীহ রুগীর অপমৃত্যু! এই খবর সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসল মিডিয়া। এতদিন তারা যে কোম্পানিকে শাপ শাপান্ত করে আসছিল, আজ তাতে নয়া মোড় এসে গেল। রুখে দাঁড়াল জনসন অ্যান্ড জনসন। বেশ টাইট করে সিল করা প্যাকেজিং-এ টাইলিনলের আবার আত্মপ্রকাশ ঘটল ট্যাবলেটের আকারে। মানুষ ফিরে পেল ব্যাথার উপশম, কোম্পানি ফিরে পেল তাদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস। শুধু তাই নয়, এই ঘটনায় ওষুধের সাম্রাজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ফেলল “জে অ্যান্ড জে”।

তাহলে বোঝাতে পারলাম তো যে আপনার নামে কেউ নিন্দা রটালেও কেন এবার থেকে আর গায়ে মাখবেন না? নিজের যা করতে ইচ্ছে করে করুন, শুধু মাথায় রাখবেন “কুছ তো লোগ কাহেঙ্গে, লোগো কা কাম হ্যায় কেহনা!”

~~~♥~~~♥~~~♥~~~♥~~~♥~~~

লেখক ~ অরিজিৎ গাঙ্গুলি

One thought on “এই গল্পটা পড়বেন না

  • Bah bah…. lekha r flow ta ekdum sabolil bhabe egiye geche. Natun lekha r Asha nie roilaam…

Comments are closed.