এই মদ যদি না শেষ হয়

Humor, Ideas, Listicles, Series, বাংলা

আপনারা পারেন ও মশাই….মদ-ফদ নিয়ে খিল্লি উড়িয়ে কি না কি লিখলাম সেটাই এফবি হোয়াটসাপ এ গাঁতিয়ে উড়ালেন এক হপ্তা ধরে…

সে ভালই করেছেন, নাহলে এই সিকুয়েল টা লেখার উৎসাহ টা পেতাম না…তবে আগেই বলে দিচ্ছি, কোন টপিক নিয়ে প্রথম লেখা বা মুভি যেটাই তৈরি হয়, সেটার পার্ট ২ টা কিন্তু সেভাবে লোকসমাজে সাড়া জাগাতে পারেনা….তাই যদি হয়, তবে আশা করব, আপনারা আমাদের আনাড়িমাইন্ডস এর একটা “আনাড়িপনা” কে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন – দেবেন তো??

(বারবার “আনাড়ি” শব্দ টা ইউজ করছি একটা ই কারণে, যাতে থ্রী ইডিয়টস এর সাইলেন্সার এবার “চমৎকার” থেকে “বলাতকার” টা ধরতে না পারে – একবার টুকেছে খুশি হয়েছি নিজের ক্যালি ভেবে, পর এর বারও সেম সিন হলে তো মুশকিল)

#ফ্লাইং_কালারস_বাবা_ব্যাক_উইথ_আ_ব্যাংগ!!

১.

হাউস পার্টি হলে মদ এর সাথে “ফদ” – মানে ওই সোডা, ঠান্ডা জলের একটা বোতলও নিয়ে আসুন – কারন জীবনে তো প্ল্যান করে কিছু করেন নি তাই এক ঘন্টা আগে দুটো বরফের ট্রে বা এক বোতল জল ভরে ডিপ-ফ্রিজে রাখার কথা আপনার মনে থাকবে না…সুতরাং পাড়ার দোকানের প্রদীপ কাকু যার কাছে ছোটবেলা বিগ-বাবুল কিনতে জেতেন বাবার থেকে খুচরো নিয়ে, তিনি যখন আপনার দেওয়া একশ টাকা থেকে ২০ টাকার সোডা, আর ৬০ টাকার ফ্লেক এর দাম টা কেটে বাকি ২০ টাকা ফেরত দেবেন, ওটা না নিয়ে পাশের সি-থ্রু ফ্রিজ থেকে একটা ঠান্ডা “বিস্লেরি” বের করে নিন – এটা দিয়ে ফারস্ট রাউন্ড টা চলবে, তারপর হয় কোন একটা মুরগি কে ধরুন গ্রুপ থেকে যাকে বাবা-বাছা করে আবার পাঠান নয়তো সুইগি দাদা কে ফোনে বলে দিন আসার পথে একটা ঠান্ডা জল “তুলে আনতে”

২.

আগের পয়েন্ট এর সেই প্রদীপ কাকু কি থার্মোকল এর প্লেট আর প্লাস্টিক এর গ্লাস রাখেন? ব্যাস তাহলে তো কথাই নেই – দেখুন লজ্জা পাবেন না এটা ভেবে যে “এহ্ ছোটবেলায় লজেন্স খেতাম আর এখন….” –
কাকুর ও সংসার আছে, আর আপনি কাকুর থেকে না নিয়ে দূরে মোড়ের মাথার “স্পেন্সারস্” থেকে নিলে আপনি মোটেই “সতী” পরীক্ষায় ডিস্টিংশন পাবেন না – রোববার সকালে যখন শুভর মা ৫০০ চিনি কেনার জন্য আড়াই ঘন্টা হ্যাজাতে আসবে দোকানে, তখন “অল অফ আ সাডেন” আপনার মদ এর “কেচ্ছা” র “এম পি থ্রি” কিন্তু হ থেক হাওড়া হয়ে পাড়ার কোনায় কোনায় পৌঁছে যাবে – মাঝখান থেকে অতদূর থেকে বিস্লেরি টা বয়ে আনতে আপনার ঝাঁট জ্বলবে, আর জল টাও গরম হয়ে যাবে

৩.

ওই দেখুন, গ্লাস আর প্লেটটার কথাই ভুলে গেলাম বলতে. তো নরমালি যেটা দেখা যায় এইসব দারু পার্টি সাধারনত শনিবার রাতেই হয় – ধরুন আপনার বাড়িতেই মোচ্ছব টা হচ্ছে কারন সেদিন আপনি নতুন জাংগিয়া কিনেছেন সেই “অনারে” – ভাই নতুন জাংগিয়া ভাই….চল মদ খাই…(হাসবেন না, ছেলেপুলে র দাবি র কোন লেভেল নেই) – সারারাতে মোটামুটি নয় নয় করে ৫ জনে প্রায় আড়াই লিটার নামিয়েছেন এবং যথারীতি সকালে আপনার সেভিয়ার সাবিত্রি দি ১০৮ বার কলিং বেল বাজিয়ে সাড়া শব্দ না পেয়ে “মাতালের গুষ্টি……মরণ!!” বলে আঁচলের চাবির গোছা ঘোরাতে ঘোরাতে চলে গেছেন….
১০ টা বাজল, আস্তে আস্তে নাক ডাকার আওয়াজ “হ্যাঁ মা ওলায় উঠে পড়েছি….কিছু আনতে হবে?” তে কনভার্ট হওয়া শুরু হয়েছে – আপনি ও উঠে এক কাপ চা বানাতে গিয়ে দেখছেন কিচেন এর সিন্ক এবং গোটা ডাইনিং এ আপনার সাধের কালো মেলামাইন এর প্লেটগুলোয় আরশোলা রা ব্রেকফাস্ট সারছে – এবার ওই রাবনের গুষ্টির বাসন নিয়ে মাজতে বসবেন?? না তো?? ওই জন্যই থার্মোকল এর প্লেট আর প্লাস্টিক এর গ্লাস.

৪.

আপনার বউ/গার্লফ্রেন্ড কি রুপালি পরদার কংগনা রানাওয়াত এর মত?? মানে মদ টা বেশ ভালবেসে খায়?
(কোথায় রাখব আপনাকে? আপনার তো আজানুলম্বিত কপাল স্যার)
এসব ক্ষেত্রে আপনি যখন ওল্ড মঙ্ক খাচ্ছেন তখন তার জন্য আনা হোয়াইট মিসচিফ কিন্তু একান্তে আপনাকে একটা “মিসচিভিয়াস” মোমেন্ট দিতে পারে……
কিন্তু –
.
.
মাসের শুরুতে বা ক্রেডিট কার্ড এর নতুন সাইকেল শুরু হলে, চেগে গিয়ে কার্ড সোয়াইপ এ নিজের জন্য একটা রেড লেবেল হলে বৌদির টাও (মানে বৌদির “মদ” টাও) যেন “স্মারনফ” এ আপগ্রেড হয় – এগুলো কিন্তু শান্তিময়-মনময়-মদময় জীবনের জন্য খুব দরকারি…অযথা ২০১৮ এ বসে ১৯৯৯ এর ২৯শে মার্চ করা আপনার সেই “মাইগ্রেটেড ঐতিহাসিক ভুল” – যেটায় আপনি ডার্ক-ওয়ারথ্ লুইস মেথডে হেরেছিলেন, সেটার রেফারেন্স ফ্রেম টা নতুন করে আবার টাঙিয়ে দেবে…..ভাল লাগবে বলুন??

৫.

এবার চলুন একটু বাইরে বেড়োই…মন্দারমনি দীঘা পুরী যেখানেই যান, পারলে দুটো জামা কম নিন, কিন্তু বোতল নিতে ভুলবেন না, এইসব টুরিস্ট স্পট গুলোয় আজকাল প্রচুর নকল মদ পাওয়া যাচ্ছে…তাই ব্যাগ ভরে মদ নিন, বিচ থেকে বারগেন করে ৩০ টাকার নকল আরমানি র সান-গ্লাস কিনুন, চোখে সাঁটিয়ে নীল সুইমিংপুল এ বডির ৩/৪ ভাগ ডুবিয়ে মাথা টা রেলিং এ ঠেসান দিয়ে জাস্ট পড়ে থাকুন – পাশে কে বাটারফ্লাই মেরে মামনি পটাচ্ছে, কে ফ্যাকাশে ব্যাকগ্রাউন্ড এ মদ এর গ্লাস এর ছবি ফোকাস করে হ্যাশট্যাগ মারছে, আর কে “জলভলি” খেলে টাইম-পাস করছে – এসব দেখে একদম সময় নষ্ট করবেন না বা চাপ ও নেবেন না…তবে যেটা অবশ্যই করবেন সেটা হল হোটেল এর একটা চ্যাংড়া বয়সী ওয়েটার কে ধরে প্রথমেই তাকে ১০০ টাকা টিপস দিয়ে দিন – আর বলুন “ভাই দুদিন আছি, বরফ আর কাবাব এর জন্য যেন আর বলতে না হয়” – ব্যাস, এবার মদ এ কন্সেন্ট্রেট করুন – মনে রাখবেন আপনি ৩০ পেগ খেলেও আপনার বউ যাওয়ার আগে বলবে “আকন্ঠ গিলতে তো যাচ্ছ, সপ্তাহের মাঝে আর বসো না”… আর আপনি ৩ পেগ খেলেও ফেরার পরে আপনাকে শুনতে হবে “এই তো দুদিন মদে ডুবে এলে, এবার কটা দিন একটু খান্ত দাও” – তাই সেই মত মদ ই খান বাইরে গিয়ে যাতে ফেরার পর নিজের ই মনে হয় “ধুর ব্বাঁ, আর মদ খাবই না”

৬.

আপনি কি মাতাল? নাকি মদ টা ভালবেসে খান?? নাকি জাস্ট খাওয়ার জন্য খান? আমি বলে দিচ্ছি… ধরুন আপনি এই লেভেল এর ল্যাধখোর যে বিয়েবাড়ি থেকে মেনু কার্ড ও নিয়ে আসেন যাতে বাড়ি এসে “কি খেলি কি খেলি” করে সবাই যখন মাথা টা খায়, আপনি ওই নিষ্পাপ কাগজ টা তুলে দিয়ে শান্তিলাভ করেন….এহেন আপনি যখন বউ কে নিয়ে দিল্লি ঘুরতে যান, এবং গোটা সরোজিনী মারকেট বউ এর পেছন পেছন কুলিগিরি করে বেড়ান শুধু এই আশায় বুক বেঁধে যে, শালা যা পারিস কেন্, শুধু রাত্রে “৫ পেগ তো হল, আর কেন?” এসব বলে জ্বালাবি না – তবে আপনি মদ পরীক্ষায় “ক” পেয়েছেন এবং আপনি শৌখিন মাতাল

৭.

শুক্রবার এলেই সব আইটি পাড়ায় বার গুলোয় হাল্কা “ধনতেরাস্” লেগে যায়!! বার এর বাইরে লাইন দেখে মনে হয় সুরুচি সংঘের ঠাকুর দেখতে এসেছি – তবে বার এ খাওয়ার কিছু বেসিক নিয়ম যেগুলো মানলে পকেট, লিভার দুটোই হাসবে, দেখে নিন একবার –

-> চেষ্টা করুন “হ্যাপি আওয়ার” এ যাওয়ার এবং পারলে পেট এ কিছু দিয়ে (“আমি মদ বলছি” অনুসারে) যান – নরমালি সব স্ট্যান্ডার্ড বারেই বাদাম চানাচুর টা দেয়, ওটা দিয়েই চালান যতক্ষন পারেন…তারপর যখন আপনার পেট এর মদ টা আপনার হাত তুলিয়ে ওয়েটার কে ডাকাবে, তখন খেয়াল করে পিনাট-মাসালা বা কাবাব কিছু একটা বলুন

-> গ্রুপ এ গেলে পেটিএম বা “স্প্লিট-ওয়াইস” ব্যাবহার করুন – আজ তুই দে, পরদিন আমি দিয়ে দেব এসব করে একজন এর ওপর বেকার চাপ দেবেন না

-> একা গেলার প্ল্যান থাকলে ফোনে চার্জ আর পকেট এ ইয়ার-ফোন কিন্তু মাস্ট, নতুন একলা মাতাল এর সাথে আলাপ হতেই পারে কিন্তু এক্কেবারে ঢলে পড়বেননা সে ছেলে হোক বা মেয়ে….কারণ টা আর বিষদে গেলাম না, ওটুকু আপনি জানেন বলেই এতদূর লেখা টা পরছেন

৮.

পার্টি ওভার এবার ফেরার পালা – গড়িয়া, নিউ ব্যারাকপুর সব পাব্লিক নিজের নিজের গ্রুপ ধরে ওলা-উবার নিয়ে নিন, নিজে ড্রাইভ করার চেষ্টা করবেন না, আজকাল মামাদের সারাবছর ই পুজোর “কালেক্সান” লেগে থাকে – ধরলে কিন্তু শ্যাটা কেস.
ওলা চলছে, আপনি আর একজন কো-মাতাল এর সাথে ভাঁট টা দেবেন দেবেন করছেন এমন সময় সে ঢালার উপক্রম করল – একদম গাড়ি দাঁড় করান, তাকে ঢালতে দিন, পারলে একটা জল এর বোতল ও দিন – খবরদার ডায়লগ মারাতে যাবেন না “পারিস না কেন খাস?” ইত্যাদি – বেকার বাওয়াল আভয়েড করুন এবং পরে আবার কখনো এনার সাথেই আবার বসলে নিজে সিংগেল গাড়ি নিয়ে ফিরুন

৯.

খুব দরকারি কথা – একদল থাকে যারা সখী, মানে মদ খাইনা, কিন্তু পার্টি তে সবার আগে গিয়ে চাট আর সফট – ড্রিনক শেষ করি – এদের পার্টি তে ডাকবেন ই না…সর্বস্য শেষ করবে – এক পয়সা বের করতে পারবেন না এদের পকেট থেকে…তবে ব্যাতিক্রম ও আছে – সেটা আপনাকে বুঝে নিতে হবে..
আরো একটা জিনিস – ৩-৪ পেগ এর পরেই হাতের স্মার্টফোন টা তুলে দুমদাম শপিং শুরু করবেন না – “জানিস ব্বাঁ, এই ঘ-ঘ-ঘড়ি টা আমার কতোওওও ধিনের সখ….কিন্তু ব্বাঁ ১৭০০০ টাকা কি মাগনায় আসে?”
অত:পর আপনার বন্ধু “ভাই তুই কেন্ ভাই, আরে আমি আছি তো” – অথচ সেই ই কিন্তু আপনার সাথে সেদিন বসতে চাইছিল না মাস এর শেষ বলে…. তাই যা কিছু শখ আহ্লাদ, সব সজ্ঞ্যানে পুরন করুন – টান্টু হয়ে নয়

১০.

লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট – অনেক মদ হল, পরদিন সকালে প্রচুর জল খান – যতটা পারেন কারন সারারাত মুতে আর তো শরীরে “জল” বলে কিছু নেই, তাই যত তাড়াতাড়ি এই ব্যালেন্স টা আসবে, তত তাড়াতাড়ি আপনার ওই “হ্যাং” ভাব টা “ওভার” হয়ে যাবে
.
.
.
.
সমাপ্ত!!

এই লেখা আর “আমি মদ বলছি” র সব গুলো ঘটনাই বেসিকালি আমাদের জীবন এর একটা “এগস্-হস্টিভ কন্সলিডেসন” এক্সেল শীট যার কোন না কোন ট্যাব এ, কোন না কোন ভাবে আপনি জুড়ে আছেন, ছেয়ে আছেন!!

ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন
ভাতে-মদে সুখী থাকুন!!

পুনশ্চ : যিনি আগের লেখা টা ঝেড়েছিলেন, যদি এই লেখা টাও ক্রেডিট না দিয়ে ঝাড়েন, এবার কিন্তু ভাঙা বিয়ার এর বোতল ছুঁড়ে মারব ওয়াড়া!!

~~~♣~~~

লেখক ~ ছন্দক চক্রবর্তী

One thought on “এই মদ যদি না শেষ হয়

Comments are closed.