প্রেমপত্র

Conversation, Friends, Humor, Ideas, Love Story, Marriage, Nostalgia, Short Story, Story, বাংলা

প্রিয় মন

হ্যাঁ, জানি কি ভাবছো! ভাবছো নিশ্চয় এ আবার কোন নতুন আদিখ্যেতা। ফোন থাকতে, ইন্টারনেট থাকতে হটাৎ করে চিঠি কেনআসলে অনেককিছু বলার আছে।

এবার বলবেআরে, বাড়িতে ফিরেই তো বলতে পারতে!’

হ্যাঁ অবশ্যই পারতাম, কিন্তু কথাগুলো আমি তোমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ঠিক গুছিয়ে বলতে পারতাম না তাই কাগজ আর পেনের আশ্রয়।

আচ্ছা বেশ অনেক ভনিতা করলাম এবার আসি কথায়। মন, তোমার মনে পড়ে আমাদের সেই প্রথম আলাপ? চিনতাম না তোমাকে, তুমিও চিনতে না আমাকে। সেদিন খুব রেগে ছিলাম বন্ধুর উপর, তোমার শান ভাইয়ার উপর, বেটা এত্ত ফাজিল, মেয়ে দেখতে যাওয়ার কাজটাও আমাকে দিয়েই করিয়েছিল। অগত্যা অত্যাধিক রাগ নিয়ে পৌঁছালাম তোমার মামার বাড়ি। তোমার মামা, মামী এমনকি তোমার মা তো আমাকেই জামাই ভেবে আদর যত্ন শুরু করে ফেলেছিলেন, নেহাত তোমার বাবার কাছে পাত্রের ছবি ছিল তাই তিনি বোঝেন ব্যাপারখানা। তবুও নানারকম মিষ্টি, নোনতা কোনো কিছুর অভাব ছিলো না, আরে যতই হোক পাত্রের প্রক্সি তো।

তুমি এলে, দেখলে আমাকে আর মুহূর্তে জয় করলে। কিছুক্ষনের জন্য প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম আমি প্রক্সি, সত্যিকারের পাত্র নয়। মিথ্যে বলব না, নিদারুণ হিংসে হয়েছিল শানের উপর। কিন্তু কি করা যাবে তুমি যে আমার অধরা মাধুরী দুলতে চলেছ অন্যের বাগানে! তবুও আশা শেষ হয়নি, চেষ্টা করেছিলাম ভাঙচি দেবার কিন্তু ফল শূন্য। তখনো বুঝিনি অদৃষ্টের চলাচল। প্রথম প্রেম সেটাও কিনা একতরফা!

দুঃখে তখন দেবদাস হবার জোগাড়। হটাৎ তোমার বিয়ের পাঁচ দিন আগে বাড়ির লোক আবিষ্কার করলো, তোমার হবু বর আর আমার বাঁদর বোন লুকিয়ে প্রেম করছে! বিনা আঁচে এক্কেবারে দাবানল। দুই বাড়ির অনেক আলোচনার পর ঠিক হলো দুই হতচ্ছাড়ার বিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে আমি না পারছি খুশি হতে না ওদের দুটোকে বকতে। যথাসময়ে বিয়ে সম্পন্ন, কিন্তু তোমার বাবা চোটে একেবারে অগ্নিশর্মা, স্বাভাবিক এত অপমান। যতই হোক মেয়ের বিয়ে বলে কথা। সেদিনই জানতে পারলাম তুমি বাংলাদেশি, ভারত তোমার মাতৃভূমি কিন্তু বাংলাদেশ তোমার পিতৃভূমি। তোমার মায়ের ইচ্ছেতে তোমার বিয়ে এদেশে দেওয়া হচ্ছিল। তোমার বাবা প্রতিজ্ঞা করলেন এই পোড়া দেশে আর না এখুনি ফিরতে হবে বাংলাদেশ, সেখানে যেমন পাত্র হোক কানা, খোঁড়া কিংবা বোবা সব চলবে, তবে ভারতীয় নৈব নৈব চ!

আমি পড়লাম আরেক ঝামেলায়। একে বেকার তায় ভারতীয়, শিকে ছেঁড়ার সুযোগই নেই। ওদিকে তোমার পাত্র জোগাড় হয়ে গেছে এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে। ততদিনে বুঝে গেছি তুমি ছাড়া আমার চলবে না। বন্ধুদের সাহায্যে পৌঁছালাম ঢাকা। উদ্দেশ্য তোমাকে নিয়ে পালাতে হবে নইলে উপায় নেই । আমি জানিনা তুমি কী দেখেছিলে আমার মধ্যে, জানিনা কেন যে দেখেছিলে, একটা ভিনদেশি চালচুলোহীন ছেলের সাথে ঘর ছাড়লে এক কাপড়ে?

মা বলে মেয়েরা ভালোবাসলে সব পারে, হয়তো সত্যি তাই। 

পাঁড় বেকার আমি, বাবার হোটেলে খাই, তোমাকে দেখে বাবা প্রায় তাড়িয়ে দেয় দেয় অবস্থা, আমার সম্বল তখন কটা টিউশনি আর এদিকে ওদিক চাকরির দরখাস্ত লেখা। আমার হাড়হাভাতে সংসার মেনে নিলে তুমি, কৃষ্ণনগরের স্টেশন লাগোয়া এক রত্তি ঘরে সংসার শুরু

এই বোর হচ্ছ নাতো?

ভাবছো এসব আবার কি বকছে পাগলটা! দুদিন আগে অভিমান করেছিলে, তাই না? তোমাকে ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে উপহার দিনি বলেআজ তোমাকে সব আমি দিতে পারি, কিন্তু তুমি আমাকে যা দিয়েছো তার তুলনা হবে না….। নিজের দেশ, নিজের পরিচয় সব ছেড়ে তুমি এক কথায় এসেছিলে আমার সাথে। তোমার সাথে থাকতে থাকতে ভুলে গিয়েছিলাম তুমি কে, তুমি বুঝতেই দাওনি কখনো, মানিয়ে নিয়েছ সব। ভ্যালেন্টাইন ডে চলে গেছে সাত দিন হয়ে গেছে । আজ ভাষা দিবস মন, আমাদের ভাইয়ের রক্তে লেখা ইতিহাস । 

উপহারের বাক্সটা খুলে দেখো মন, আর আজ তাড়াতাড়ি ফিরবো । 

ইতি তোমার

ফাজিল অভীক

চিঠি পড়ে, চোখের জল সামলে মনোরমা যখন বাক্সটা খুললো, দেখলো একখানা বাংলাদেশি পতাকা আর একখানা ভারতীয় পতাকা একসঙ্গে রাখা, নিচে ছোট্ট চিরকুটে লেখা

ভাল ভাষা আর ভালোবাসার নেই কোনো বেড়াজাল…’

 

 

~~~^^^~~~

 

সায়ন্তিকা দত্ত