সরষেক্ষেত ও খৈনি

Friends, Humor, আদতে আনাড়ি, বাংলা

সবে এইচ এস্ পাশ করেছি। জঘন্য রেজাল্ট।
জয়েন্টেও পিকাসো। অগত্যা কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে ইটাচুনা কলেজে দুদিন ক্লাস করার পরেই রূপম ইসলাম কানে কানে বলল –

আরও একবার চলো ফিরে যাই,
ডাক্তারির প্রান্তরে দাঁড়াই,
যদি ডাক্তারি না পাস্,
কর্ কারিগরী ফোকটে, প্রাইভেটে।

মেহনত করে বড় করেছে বাপ মা। অপদার্থ সন্তানের পোঁদে লাত্থি তো মারা যায় না, কোনও মতে মাস্টার ফাস্টার দিয়ে যদি বৈতরণী পার করে দেওয়া যায় তা হলে বংশপ্রদীপটা হ্যালোজেন হয়ে যাবে, এটুকুই আর কি। বংশপ্রদীপ হ্যালোজেন হবার প্রসেসে
একদিন দুপুরে চোদ্দপুরুষকে উদ্ধার করতে, কোচিংয়ে যাচ্ছি।

ভরপেট্টা খেয়ে ট্রেনে উঠেছি। “ভাই এদিকে সর, ওদিকে হঠ”র মতন টাইম উপরওয়ালা আমায় দেয়নি। সীটে বসা মানে তখন উদ্বুদ্ধ মোটকা ডিরোজিওর পরাজয়। ট্রেনের রডই তখন আমার ঐশ্বর্য রাই ; আর রডে হ্যালান মেরে একটা বিড়ি ধরিয়ে ‘ওয়াদা রাহা প্যায়ার সে প্যায়ার কা’ গাইতে গাইতে নিজের বিচিত্র হলুদ গ্লাসের চশমা দিয়ে দিগন্তরেখায় বলদামির রঙ ঢেলে দেওয়াটাই আমার পরমাত্মার ছোঁওয়া। সাথে বয়কাট রাপুনজেল ব্লিচ করা চুল। মা কাকীমার ভাষায় অভদ্র,ইতর,টোটাল ছোটোলোক।

যাই হোক রডে পোজিশন লে লিয়া। তরুণ কুমারের মত বডি আর উত্তম কুমারের অ্যাটিচ্যুড নিয়ে পকেটে হাত বুলালাম। বিড়ির তাড়াটা মিসিং। ধ্যার্বাল! ঝনঝন্ করে হৃদয়ের গুঁড়ো ঝরে পড়তে লাগল। উড়ে যেতে লাগল বাইরে রানিং গাছপালা, ল্যাম্পপোস্টের গায়ে।

– কী রে দেবু?
একজন ডাকল সাইড থেকে।

এই ব্বাঁ!!! কে বে? গ্যাণ্ডাল্ফ? Deus ex machina!!!

প্রাইমারি স্কুলে একসাথে পড়তাম। টোটাল সায়ানাইড মাল। আপনাকে মংলা হাটে কিনে ডকে বেচে দেবে নয় ডকে কিনে মংলা হাটে। কিন্তু ছেলে একদম চাঙ্গা।

– কী রে শালা? ব্যাটারি ডাউন কেন বে?
– বিড়ির তাড়াটা ভুলে গেছি ব্বাঁ।

খ্যাঁ খ্যাঁ করে হাসলো।

– এই লাও সলিউশান।

পকেট থেকে স্টীলের ডিবে বেরোল। খৈনি বানাচ্ছিল। খৈনির একটা মজা আছে। এনিটাইম নেশা। খানিক পানের মতন, কেবল ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তিটা বেশী।

খৈনি আমি খেতাম না, খাই ও না। মারাত্মক জিভ জ্বলে আমার। ঐ বল খেলার মাঠে ছেলেদের ভলি খেলা শেষ হলে ওরা বানাতো, টুকটাক। আমরা ক্রিকেট শেষ করে ছেলেদের ভলি খেলা দেখতাম। তখনই কয়েকবার খেয়েছি। তারপর পড়া আর প্রেমের চাপে আর মাঠে যাওয়াই হত না। খৈনি খাওয়াও হত না। তবে চুন দিয়ে ডলা, ধুলো ঝেড়ে বানানো সবই শিখে রাখা আছে। বলা যায় না, কখন কী দরকার পরে।

যাইহোক্ এদ্দিন বাদে মোলাকাত, না করে দেবো? তাছাড়া খৈনি ডলা ও ঝাড়ার মধ্যে বেশ একটা কেত আছে। হয়েই যাক্।

বললাম – শালা খাইনা বে, তাও বলছিস্ যখন এত করে, দে ব্বাঁ এক টিপ্।

স্যাট্ করে একটিপ জিভ আর মাড়ির গ্যাপে চালান করে দিলাম। ভগবান যেন ওকে ঐ কারণেই পাঠিয়েছিল। হোক না ফর্ম্যাট আলাদা, নেশা তো হল। পরের স্টেশনে বাবু নেমে গেলেন। কিন্তু ততক্ষণে যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে।

রাজনীতি সিনেমায় রণবীর কাপুরকে ক্যাটরিণা বলেছিল, তোমার দাদা অর্জুন রাম্পাল মরেছে তো কী হয়েছে? আমার পেটে নিজের অংশ দিয়ে গেছে।

তা খৈনিকুমার নেবে গেলেন তো কী হয়েছে, আমার পেটে নিজের অংশ দিয়ে গেলেন।

ভরা পেটে খৈনি খাইনি আগে আমি।
মাকালি বলছি মনে হল দুনিয়া দুটুকড়ো হয়ে গেল। গোধুলির সূর্যকে দেখেও শুয়োরের বাচ্চা বলতে ইচ্ছে করছিল। ঐরকম ভরা পিউবার্টিতে ডিও ফিও মেরে আমার টোটাল ফেরোমণ এফেক্টের হাতে হ্যারিকেন, পোঁদে বাঁশ হয়ে গেল।

ট্রেন যত না স্পিডে যাচ্ছে, তার ডবল স্পিডে ঘাম দিয়ে হাগা পাচ্ছিল আমার। ভলেন্টিয়ার কপাটিকা মহাশয় কোনও মতে দড়ি ধরে দেশপ্রিয় পার্ক সামলাচ্ছিলেন। কোনও মতে বেঁকিয়ে চুরিয়ে গিয়ে একটা সীটে বসলাম। ইজ্জত শেষ। রড থেকে সীটে আসা মানে আয়নায় নিজের দিকে আর তাকাতে পারবো না আমি। রাম, আল্লাহ, যীশু, নানক কাউকে বাদ দিচ্ছিনা, পারলে নারায়ণের শঙ্খটাই গর্তে ঢুকিয়ে মালটা আটকাই তখন।

কোনমতে স্টপেজ এল। মাসির বাড়ি যেতে হবে। আর কোন রাস্তা নেই। চুলোয় যাক পড়ার ব্যাচ। ট্রেন থেকে নামলাম কোনও মতে। প্ল্যাটফর্ম আর ট্রেনের গ্যাপটা কভার করতে একটু স্ট্রেচ করতে হয়। আমার মত কণ্ডিশনে ট্রাই করে দেখবেন। বুঝবেন ইজ্জত আর বেজ্জতের মধ্যে গ্যাপ ওটুকুই। পা টিপে টিপে এক মিলিমিটার / ঘন্টা বেগে হেটে গিয়ে রিক্সায় উঠলাম। সিড়ি দিয়ে নামা, রিক্সায় ওঠার সময় কীভাবে সাম্য বজায় রেখেছি কেবল বিধাতাই জানেন। একটু এদিক ওদিক হয়েছে কি অকালে সূর্যমুখী ফুটে এরিয়া সর্ষেক্ষেত হয়ে যাবে।

রিক্সাআলাকে হাতে পায়ে ধরলাম।

– কাকা সরকার পেট্রোলপাম্প যাবো। যত আস্তে পারবে চালাও। পাঁচটাকা বেশী দেবো। রিক্সা যেন না লাফায় কাকা। আমি শেষ তাহলে…

দশ মিনিটের রাস্তা কুড়ি মিনিটে পৌছে ভাড়া মেটাতে গিয়ে দেখি নোট নেই। কোনও মতে খুচরো গুণে গুণে দিলাম। এক এক সেকেণ্ডকে মনে হচ্ছে এক দিন।

আবার পা টিপে হাটা চালু। লিফ্টে উঠলাম। মোটে চারতলা উঠব। নাঃ এযাত্রা বেঁচে গেলাম মনে হয়। মনকে বোঝাচ্ছিলাম আর “দু মিনিট বাবু”। তিনতলায় ঘ্যোঁৎ করে লিফ্টটা দাঁড়িয়ে গেল। লোডশেডিং।

– লোকনাথ বাবা! এই দিব্যি করছি আর খৈনি খাবো না। ট্রেনে বিড়িও খাবো না। প্লিজ হেল্প কর।প্লিজ। নতুন জিন্স পেয়েছি ঠাকুর। এমনকি জাঙ্গিয়াটাও পয়লা বৈশাখেই কেনা।

কারেন্ট এসে গেলো। লোকনাথ বাবা ইজ দ্যি ম্যান ডুড্। আজ অবধি কাউকে খালিহাতে ফেরাননি উনি। ঠাকুরকে তেল মারতে মারতে মাসীর ফ্ল্যাটে গেলাম।

কিন্তু ওদিন রাহু আছে কপালে। আশ্চর্য লোক মাইরি রাহুটা। লিঙ্গ ছাড়াই পায়ুমন্থন করতে সক্ষম। ফ্ল্যাটে তালাচাবি দেওয়া। মাসী কাশ্মীর গেছে ঘুরতে। বেমালুম ভুলে গেছিলাম। ব্রেণের আর কি দোষ। পিটুইটারি থেকে মেডুলা অবলাঙ্গাটা সব তখন পোঁদে ফোকাস করছে যে। আর পারছি না। যা হবে হবে। পাশের ফ্ল্যাটে বেল বাজালাম। প্রতিবেশী দরজা খুললেন। আমায় চিনতেন।

কজটা চেপে দিয়ে এফেক্টটা বললাম। উনি ভেতরে গেলেন। একটা আশ্চর্য প্রদীপ নিয়ে এলেন।বললেন দরজায় ঘষ। ঘষলাম। গুহাটা খুলল। সোজা গেলাম। আরেকটা গুহা। ভেতরে কমোড্। বসে হাল্কা চাপ দিতেই জিনি বেরিয়ে গেল।

?

✍ দেবপ্রিয় মুখার্জি