অর্ধাঙ্গিনী

Love Story, আদতে আনাড়ি, বাংলা

নীহারিকা কেঁপে উঠে হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল, “বিক্রম, আস্তে….!” ঘরের কোণে জ্বলতে থাকা দুটো লাল মোমবাতির স্নিগ্ধ আলো এই মুহূর্তকে যেন আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। বিক্রম ছাড়িয়ে নিল ওর হাত, টেনে নিল নীহারিকার মোহময়ী শরীরটাকে নিজের আরও কাছে, পিঠে পড়ল আদরের দাগ, ওষ্ঠ অধরের এক নৈসর্গিক খেলায় মেতে উঠল দুটো শরীর।

~ ♥ ~ ♣ ~ ♥ ~

– স্যার, বেড টি!

রুমের দরজায় দুটো টোকা পড়তেই বিক্রম বেডসাইড টেবিলে রাখা ঘড়ির দিকে তাকালো। সকাল সাতটা। নীহারিকা এখনও ঘুমে আচ্ছন্ন। বিছানা থেকে নেমে দরজা অল্প ফাঁক করে চায়ের ট্রে নিল বিক্রম।

– গুড মর্নিং স্যার! আপনাদের গাড়ি রেডি থাকবে সাড়ে আটটার টার মধ্যে। রিসেপশন থেকে গাড়ির নাম্বার জেনে নেবেন প্লিজ।

– ওকে, থ্যাংক ইউ।

ক্লায়েন্টের সাথে মিট করার জন্য এই ২-৩ দিনের বিজনেস ট্যুর গুলোকে খুবই ঘেন্না করে বিক্রম। কিন্তু স্রেফ সঞ্জয়ের ওর ওপর অগাধ আস্থাতেই বিরক্তি সত্ত্বেও বারবার রাজি হয়ে যায় আসতে।

“মিটিং কখন?” সাদা বেডশিটটা বুক অবধি টেনে নিয়ে আধশোয়া অবস্থায় জিজ্ঞেস করল নীহারিকা।

– আর মাত্র এক ঘন্টা বাকি। জলদি ওঠো! সঞ্জয় একটু বাদেই কল করা শুরু করবে। তোমার চা রাখলাম এখানে।

– আমি কনফিডেন্ট এই ডিল টা তুমি শিওর জিতছো। আর প্রমিস করো এর পরের বার তুমি আমাকে এমন একটা জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবে যেখানে কোনও কাজ থাকবে না, আর ওই সঞ্জয়ও তোমার হদিশ পাবে না।

– ওক্কে বাবা, প্রমিস। এবার উঠে পড়ো প্লিজ।

– আরে, তুমি রাতে আমার ল্যাপটপ চার্জে লাগিয়েছিলে? প্লিজ না বোলো না, সঞ্জয় আমায় মেরে ফেলবে যদি আবার সেই একই ভুল হয় এবার।

খাট থেকে নেমে নীহারিকা দুহাত দিয়ে খোলা চুল গোছ করে ধরে মাথার ওপরে একটা টপ নট বেঁধে চায়ের কাপ তুলে চুমুক দিল।

– আর হ্যাঁ বিক্রম, আমাদের রুমের আলাদা রিসিপ্ট নিতে ভুলো না কিন্তু, লোকজনের খুব সন্দেহের বাতিক।

বিক্রম ব্যস্ত ওর অফিসের ব্যাগ গোছাতে, কথাটা ওর কানে পৌঁছলেও কোনও জবাব দিল না। নীহারিকা চেয়ারের ওপর থেকে টাওয়েল নিয়ে বাথরুমে ঢুকল। কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকেই আওয়াজ এল,

– শুনছ?

– হ্যাঁ বলো শুনতে পাচ্ছি।

– আসবে নাকি একবার?

– ইয়ার্কি করার সময় নেই নীহারিকা। বাই দ্য ওয়ে, তোমার লকেটটা বাথরুমের তাকে পড়ে আছে দেখলাম।

– এবাবা, সরি সরি! থ্যাংক ইউ। আচ্ছা, মায়া ফোন করেছিল তোমাকে সকালে?

||

– আর এই হল আমাদের প্রজেক্ট মডেল। ক্লায়েন্টরা সবসময় আমাদের এই মডেলের ওপর ভরসা রেখে এসেছেন, আর ভগবানের আশীর্বাদে আমরা তাদের প্রত্যাশার থেকে বেশিই ডেলিভার করতে পেরেছি।

সামনের সিটে বসা ক্লায়েন্টের প্রতিনিধি হাততালি দিয়ে উঠলেন, আর সেইসঙ্গে রুমের বাকিরাও তাকে অনুসরণ করলেন। বিক্রমের চোখেমুখে স্বস্তির হাসি। টাই এর ফাঁস টা হাত দিয়ে একটু চেপে নিয়ে বিক্রম তাকালো ভিডিও স্ক্রিনে উপস্থিত সঞ্জয়ের দিকে। নীহারিকা ব্যস্ত ওর ল্যাপটপে, প্রেজেন্টেশানের দায়িত্ব ওরই হাতে।

বিক্রম বলে উঠল, “একটা শেষ স্লাইড, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন দেখে নি এই প্রোজেক্টের বাজেট এস্টিমেট কি দাঁড়াবে।”

বিক্রম পিছন ঘুরে তাকালো বড় প্রোজেক্টর স্ক্রিনের দিকে। সেখানে একটা নীল ব্যানারের মধ্যে লেখা, “থ্যাঙ্ক ইউ, বাই!”

“সরি!” বলেই বিক্রম কটমট চোখে তাকালো নীহারিকার দিকে। সে এখন হাতে কফির কাপ নিয়ে একমনে তাকিয়ে তার ল্যাপটপ স্ক্রিনে, এদিকে প্রেজেন্টেশনে কি দেখানো হচ্ছে যেন কোনও ধারনাই নেই। সঞ্জয় চ্যাটে পিং করে ওকে ডাকবার চেষ্টা করল। চমকে উঠে নীহারিকা বিক্রমের মুখের দিকে তাকিয়ে ভুল বুঝতে পেরে তাড়াহুড়ো করে স্লাইড চেঞ্জ করতে গিয়ে হাতের কফিটা পড়ল কীবোর্ডের ওপর। দুটো ছোট স্পার্ক, প্রজেক্টরের আলো বন্ধ হয়ে গেল।

“মায়া!” বলে চেঁচিয়ে উঠতে গিয়েও থেমে গেল বিক্রম।

||

“ওই নির্লজ্জ মেয়েটা আর বিক্রমের মধ্যে কি চলছে বলো তো?” মায়ার ধৈর্যের বাঁধ যে একেবারে ভাঙার জন্য তৈরি, তা ওর মুখচোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

সঞ্জয় বুঝতে পারছে যে মায়া খুবই সিরিয়াস।

– শোনো, ওদের দুজনের মধ্যে কিসসু নেই। জাস্ট একটু হেলদি ফ্লার্টিং চলে বলেই আমার মনে হয়।

– ফ্লার্টিং? সে আবার হেলদি হয় নাকি! সত্যি সঞ্জয়, তোমরা পুরুষরা কি এমনটাই মনে করো? ফ্লার্টিং কোনদিনও হেলদি হতে পারে না, আর একজন বিবাহিত পুরুষের জন্য তো কখনোই নয়! এই শব্দটা পুরুষদেরই তৈরি করা অতিরিক্ত যৌন কামনা মেটানোর একটা বাহানা।

মায়া সোফা থেকে উঠে ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে শুরু করল নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে। হঠাৎ থেমে গিয়ে সঞ্জয়ের দিকে ফিরে প্রশ্ন করল, “আচ্ছা, আমার বর কি ওই মেয়েটার সাথে….? তোমাকে কিছু বলেছে এই নিয়ে?”

– প্লিজ আমাকে নীহারিকার সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস ক’রো না, সত্যি ওকে দিয়ে কোনও কাজ হয় না। ভুলে যাও ওকে মায়া। তার চেয়ে বলো বিক্রম কি আনলো তোমার জন্য এই ট্যুর থেকে?

– একটা হীরের লকেট। বাই দ্য ওয়ে, তোমার টপিক চেঞ্জ করার দক্ষতা দেখে আমি ইম্প্রেস্ড। বিক্রম একটা যুতসই বন্ধু পেয়েছে তোমার মধ্যে।

||

– না স্যার, লিফ্ট কাজ করছে না সন্ধে থেকেই। আমরা মেকানিক ডেকে পাঠিয়েছি, কিন্তু মাঝরাত থেকে ওরা কাজ শুরু করবে বলেছে। আজ প্লিজ একটু ম্যানেজ করে নিন স্যার।

অফিসে ১০ ঘন্টা খেটে এসে ১৪ তলা হেঁটে ওঠা মুখের কথা নয়। বিক্রম নিরুপায় হয়ে উঠতে শুরু করল।

~~

ডোর বেল বেজে উঠল!

মায়া ফ্রিজ বন্ধ করে শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে নিয়ে এসে দরজা খুলে দেখে বিক্রম প্রচণ্ড হাঁপাচ্ছে।

– কি হয়েছে?

– হতচ্ছাড়া লিফ্টের বারোটা বেজেছে। সত্যি একটা ফালতু জায়গায় থাকি আমরা।

শার্ট খুলে সোফায় ছুঁড়ে দিয়ে বেডরুমে ঢুকে বিক্রম দরজা ভেজিয়ে দিল। মায়া তোড়জোড় শুরু করল ডিনারের। আজ বিক্রমের পছন্দের আলুর পরোটা বানিয়েছে। সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ঢেকে রাখল প্লেটটা। কিন্তু প্রায় পনেরো মিনিট হয়ে গেল বিক্রম ঢুকেছে ঐ ঘরে। মায়ার আজ অনেক কথা বলার আছে ওর সাথে। কিন্তু এই অপেক্ষায় রাগ কমে না যায়, এই ভেবে ঘরের দরজা আলতো করে ফাঁক করল মায়া।

লাইট আর পাখা চলছে ঘরে, ব্যালকনির দরজাও খোলা। কিন্তু বিক্রম তো নেই ঘরে। মায়া ছুটে ব্যালকনির দরজার কাছে গেল, এখানেও তো নেই বিক্রম। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল মায়ার। ধীরে ধীরে ব্যালকনির রেলিং এর কাছে এগোল।

নিচে অনেক মানুষ একজোট হয়েছে আর তাদের মধ্যে অনেকে ওপরের দিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছে। শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল মায়ার। অবশ লাগছে নিজেকে কেমন একটা। রেলিং থেকে দূরে সরে এসে ঘরের দিকে একটা অজানা আতঙ্কে ফিরে তাকালো মায়া। বিক্রম কোথাও নেই। তবে কি….?

মায়া জানে না এখন কি করা উচিৎ। হাত পা কেমন ঠান্ডা হয়ে আসছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। বিছানায় পড়ে থাকা ফোনটা অন করে তাড়াতাড়ি কিছু এমার্জেন্সি নাম্বার খুঁজতে শুরু করল। হঠাৎ…

ডোরবেল বেজে উঠল আবার!

চমকে গিয়ে কোনওরকমে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগোল মায়া, কিছুক্ষণ থেমে দরজা খুলল।

“সরি, দেরি হয়ে গেল ডার্লিং, হতচ্ছাড়া লিফ্ট টা আবার বিগড়েছে আজ,” হাঁপাতে হাঁপাতে বলল বিক্রম কম্পিত মায়ার দিকে তাকিয়ে।

||

– চিন্তা করবেন না মিস্টার চৌধুরি। আপনার মিসেসের টেস্ট রিপোর্ট সব নরমাল। আমি যা যা বললাম, সেগুলো একটু মেনে চলতে বলবেন। আর আমার সাজেশান ওনাকে আর একটু বেশি সময় দিন পার্সোনালি। ঘুরে আসুন না কোথাও, মায়ার খুব ভালো লাগবে।

– থ্যাংক ইউ ডক। একটা প্রশ্ন শুধু। এমন ঘটনা কি আবার ঘটতে পারে?

– আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।

বিক্রম দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বেরিয়ে এল চেম্বার থেকে।

||

গোয়া এলে বিক্রমের পছন্দ সমুদ্রের ধারে এই রিসর্ট। অন্য জায়গার থেকে একটু নিরিবিলি আর এদের প্রাইভেট বিচও আছে, তাছাড়া সুইমিং পুলের পাশে বারটাও বেশ লোভনীয়। তবে এবারে না কোনও ল্যাপটপ, না কোনও অফিসের কাজ, শুধু মায়ার সাথে একটা সুন্দর সময় কাটানোই প্রধান উদ্দেশ্য।

হাঁটু মুড়ে বসে মেনু কার্ড হাতে ধরে বিক্রম জিজ্ঞেস করল মায়াকে,

– হুকুম কিজিয়ে লাঞ্চ মে কেয়া পেশ কিয়া যায়। বান্দা হাজির হ্যায় আপকে খিদমত মে।

– উমম্, দাঁড়াও ভাবি, আচ্ছা এমন করলে হয় না….

বিক্রমের ফোন বেজে উঠল।

“হ্যালো…. কী খবর?….. কী!……এক মিনিট ধরো…” মায়াকে অপেক্ষা করতে বলে বিক্রম ফোন হাতে নিয়ে বাইরের করিডরে চলে গেল। সন্দেহের চোখে তাকালো মায়া।

বিক্রম কে দেখে খুব চিন্তিত আর বিরক্ত লাগছে। দূর থেকে ওর কথা কিছু শোনা যাচ্ছে না, কিন্তু দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে মনে হচ্ছে সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কাউকে খুব বকাবকি করছে।

মায়া সরে এসে ঘরের জানলার কাছে দাঁড়াল। সুইমিং পুল দেখা যাচ্ছে এখান থেকে। পুলের ধারে একটা হেলানো চেয়ারে একজন বুড়ো মতন লোক শুয়ে বই পড়ছে। তার পাশেই এক মহিলা পুলে নামবার জন্য তৈরি হচ্ছে।

ইতিমধ্যে বিক্রম হন্তদন্ত হয়ে এসে পড়ল, “লাঞ্চের জন্য তৈরি? সরি একটা দরকারি কল এসে গেছিল।”

মায়া মুখ না ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে আঙুল দিয়ে জানলার দিকে দেখাল, “চিনতে পারছো ওকে?”

||

– বিশ্বাস করো, আমি তোমায় ছেড়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারি না, তাই তোমাকে না জানিয়েই চলে এসেছি। খুব ভালো সময় এটা বিক্রম। চলো আমরা দুজনে মিলে গিয়ে মায়া কে বুঝিয়ে বলি। তোমার একার যখন সাহসে কুলোচ্ছে না।

বিক্রম ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দু কাঁধ ধরে জোরে ঝাঁকিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, “বাস্তবে ফিরে এসো পাগলামো ছেড়ে!”

– কি বলছ তুমি বিক্রম। আমার এখানে আসা পাগলামো? মায়াকে নিয়ে ছুটি কাটাতে চলে এলে আমাকে না জানিয়ে?

রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল বিক্রম।

||

মায়া টপটা খুলে ছুঁড়ে ফেলল মেঝেতে আর বিক্রমকে জড়িয়ে ধরল চেপে। এরপর ওর জামার বোতাম গুলোও তাড়াতাড়ি খুলে সেটাও ছুঁড়ে ফেলল পাশে। ব্যালকনির পর্দার ভেতর দিয়ে আসা গোধূলির আলো এসে পড়ছে বিছানাতে, আর তাতে মত্ত দুই শরীর কে দেখে যেন মনে হচ্ছে তারা বহুদিন থেকে পিপাসার্ত।

একটা দীর্ঘ চুম্বনের পর মায়া সোজা হয়ে বসল বিক্রমের ওপরে, আর হঠাৎ কেমন আনমনা হয়ে গেল। বিক্রম হাত দিয়ে ডাকল, “কি হল মায়া? কি দেখছ ওদিকে?”

কিছুক্ষণ একদৃষ্টে খাটের মাথার দিকে তাকিয়ে মায়া ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে কিছু যেন শোঁকবার চেষ্টা করতে লাগল।

“আমি একটা অন্যরকম পারফিউমের গন্ধ পাচ্ছি বিক্রম। আমাদের ঘরে কি অন্য কেউ আছে?” বলেই বিক্রমের দিকে তাকাল মায়া।

||

রিসেপশনের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন, “আপনি ওখানে বসুন ধৈর্য ধরে। মায়া চৌধুরির সেশন চলছে। আপনার নামও ডাকা হবে।

বিক্রম সামনের সোফায় বসে উল্টোদিকের বয়স্ক দম্পতির দিকে তাকালো। ওদের হাতে কিছু স্ট্যাম্প পেপার। এই বয়সে ওদের আবার কি ঝামেলা কে জানে। বিক্রম আশেপাশে দেখতে লাগল, ফ্যামিলি কোর্টে ও এই প্রথমবার, এখানকার কার্যকলাপ সম্বন্ধেও তেমন কোনও ধারনা নেই। সঞ্জয়ের থেকে আভাস পেয়েছিল আগেই যে মায়া এমনই কিছু একটা প্ল্যান করছে। কিন্তু সেটা যে সত্যিই এতদূর এগিয়ে যাবে, তা আন্দাজ করতে পারেনি বিক্রম। খুব অসহায় লাগছে আজ নিজেকে হঠাৎ।

– মিস্টার বিক্রম চৌধুরি, প্লিজ ভেতরে যান।

বিক্রম মাথা নিচু করে বসেছিল, নাম শুনতেই চমকে উঠল। পাশের কেবিনের দরজা খুলে যেতেই মায়া বাইরে বেরিয়ে এসে দূরে কোণে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে গিয়ে বসল। বিক্রম কে যেন দেখেও দেখতে পেল না।

বিক্রম উঠে এগিয়ে গেল সেই কেবিনের দিকে। দরজা খুলে ঢুকতেই একজন মধ্যবয়স্ক মানুষের গলা শোনা গেল,

“মিস্টার বিক্রম, আসুন আসুন, প্লিজ বসুন। মেক ইয়োরসেল্ফ কম্ফোর্টেবল। এত ব্যস্ততার মধ্যেও আজকের কাউন্সেলিং সেশনে আসার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আমি আপনাদের কেসটা দেখছি, আর মিসেস মায়া চৌধুরির দিক থেকে যা শোনবার সব শুনেছি।” খুব পরিস্কার ও আত্মবিশ্বাসী গলায় বললেন ডিভোর্স লইয়ার।

– আপাতদৃষ্টিতে এটাই মনে হয় যে মিসেস মায়া চৌধুরি খুবই কষ্টের মধ্যে আছেন শুধুমাত্র আপনার জন্যই। তবে এই কেস এখন খুব কমন জানেন তো? তাই চিন্তা করবেন না, আমার একটা সাজেশান আছে আপনার জন্য।

বিক্রম অনুসন্ধিৎসু চোখ নিয়ে শুনে যেতে থাকল।

– সাধারণত আমরা বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষকেই একসাথে বসিয়ে একটা দ্বিতীয় সুযোগ দি যাতে একটা সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু তার আগে আপনাকে একটা ব্যক্তিগত পরামর্শ দিতে চাই। আপনি মিসেস মায়াকে আপনার বন্ধু মিস নীহারিকার সাথে দেখা করিয়ে দিচ্ছেন না কেন? তাহলেই তো খুব সোজাসাপ্টা পথে ব্যাপারটা সল্ভ হয়ে যায়। চেষ্টা করে দেখুন না একবার। এইভাবে লুকিয়ে কতদিন থাকতে পারবেন?

বিক্রম কিছুক্ষণ চুপ থেকে খুব শান্তভাবে উত্তর দিল, “আসলে, সেটা অসম্ভব! মায়ার ডাক্তার আমাকে পরিস্কার বলে দিয়েছেন মায়াকে কোনরকম স্ট্রেস থেকে দূরে রাখতে। তাই মায়ার সাথে যদি নীহারিকার দেখা হয়ে যায়, তাহলে মায়াকে আর ওর স্বাভাবিক সেন্সে ফেরানো যাবে না।”

– দেখুন, অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, আপনি কিন্তু ওনাকে বুঝিয়ে এই পিটিশান ফেরত নেওয়াতে পারবেন, বিশ্বাস করে দেখতে পারেন। আচ্ছা, আমাকেই মধ্যস্থতা করতে দিন বরং। আপনি কি মিস নীহারিকা রায়কে আমার চেম্বারে আনতে পারবেন একদিন?”

বিক্রম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আপনি একটু আগে মায়ার সাথে কথা বলেছেন, তাই তো?”

– হ্যাঁ তো।

– তাহলে আপনার নীহারিকার সাথেও কথা হয়ে গেছে।

~~~♣~~~

One thought on “অর্ধাঙ্গিনী

Comments are closed.